রানাঘাট-বনগাঁ রেলপথে অবশেষে দ্বিতীয় লাইন বসানোর জন্য বড় পদক্ষেপ নিল রেল। রেলমন্ত্রকের তরফে প্রকল্পটির জন্য ৩৯৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। তার পর থেকেই খুশির হাওয়া বইছে নদীয়া ও উত্তর ২৪ পরগনা জুড়ে। বহুদিন ধরেই একটিমাত্র লাইনে ট্রেন চলাচলের কারণে দেরি, ক্রসিং সমস্যা এবং ঘনঘন সিগন্যাল জটের শিকার হচ্ছিলেন নিত্যযাত্রী ও ব্যবসায়ীরা। সেই জট কাটিয়ে অবশেষে প্রকল্পের অনুমোদন মেলায় স্বস্তি মিলেছে সবার।
আরও পড়ুন: বুক করা টিকিটে ভ্রমণের তারিখ বদলের অনুমতি দেবে রেল, কবে থেকে শুরু নয়া ব্যবস্থা?
পূর্ব রেল সূত্রে খবর, রানাঘাট-বনগাঁ লাইনটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৩ কিলোমিটার। এই রুটে ট্রেন চলাচলের চাপ বর্তমানে ১১৪ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে, অর্থাৎ সক্ষমতার অনেক ওপরে চলছে পরিষেবা। গত কয়েক বছরে এই সেকশনে ট্রেনের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনই যুক্ত হয়েছে এসি লোকাল ট্রেনও। ফলে প্রতিদিনই গন্তব্যে পৌঁছতে দেরি হচ্ছে যাত্রীদের। রেলের আশা, দ্বিতীয় লাইন চালু হলে সময়সূচির শৃঙ্খলা বজায় থাকবে এবং পরিষেবা আরও দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য হবে। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রকল্পের আওতায় রানাঘাট থেকে বনগাঁ পর্যন্ত মোট ন’টি স্টেশনের আধুনিকীকরণ হবে। মাঝেরগ্রাম ও গোপালনগর সংলগ্ন এলাকায় তৈরি করা হবে দুটি নতুন লিমিটেড হাইট সাবওয়ে, যাতে ট্রাফিক চলাচল নির্বিঘ্ন থাকে।
রেল আধিকারিকদের মতে, দ্বিতীয় লাইন তৈরি হলে যাত্রীবাহী ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি পণ্যবাহী মালগাড়িও সহজে চালানো যাবে। ফলে বছরে প্রায় ০.৮৮ মিলিয়ন টন অতিরিক্ত পণ্য পরিবহণ সম্ভব হবে, যা রেলের বার্ষিক আয় কয়েক কোটি টাকা পর্যন্ত বাড়াতে পারে। স্থানীয় ব্যবসায়ী মহলের মতে, রানাঘাট ও বনগাঁর মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে দুই জেলার বাণিজ্যে গতি আসবে। পণ্য পরিবহণে সময় কমবে। ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্যও লাভজনক হবে এই প্রকল্প। নিত্যযাত্রীদের দাবি, দ্বিতীয় লাইন বসলে ট্রেনের বিলম্ব হওয়া কমবে। পাশাপাশি যোগাযোগ আরও আরামদায়ক ও দ্রুত হবে।
তবে খুশির পাশাপাশি উদ্বেগও রয়েছে। যাত্রী ও স্থানীয় সংগঠনের দাবি, বরাদ্দ ঘোষণার পরেও বহু রেল প্রকল্প অতীতে থেমে গিয়েছে টেন্ডার ও অনুমোদনের জটিলতায়। তাই এবার যেন সেই পুনরাবৃত্তি না হয়। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক দীপ্তিময় দত্ত অবশ্য আশাবাদী। তিনি জানান, এই প্রকল্পের জন্য যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। রানাঘাট-বনগাঁ সেকশনে ডাবল লাইনসহ আধুনিক পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু হবে শীঘ্রই। অর্থ এসে গিয়েছে, তাই আশা করা হচ্ছে দ্রুত কাজ শুরু করা যাবে।