দুর্গোৎসবের আনন্দ শেষে প্রতিমা নিরঞ্জনের দিনেই একাধিক জায়গায় নামল শোকের ছায়া। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় প্রতিমা বিসর্জনের সময় ঘটে গেল একাধিক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। কোথাও গঙ্গার স্রোতে তলিয়ে গেলেন দুই যুবক, কোথাও আবার বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল মাইকম্যানের। হুগলি, হাওড়া ও বর্ধমান, তিন জেলায় একের পর এক এই ঘটনাগুলি ঘিরে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে দুর্গোৎসবের আনন্দময় আবহে।
আরও পড়ুন: বিসর্জন উপলক্ষে ঘাটে ঘাটে কড়া নজরদারি, প্রস্তুত কলকাতা পুরসভা ও পুলিশ
হুগলির ভদ্রেশ্বরে গঙ্গায় তলিয়ে যান দুই যুবক। শুক্রবার বিকেলে হুগলির ভদ্রেশ্বর শ্রীমাণী গঙ্গার ঘাটে প্রতিমা নিরঞ্জন করতে গিয়ে গঙ্গার স্রোতে ভেসে যান দুই যুবক। পুলিশ সূত্রে খবর, মানকুন্ডুর শান্তি নগরের মুক্তি সংঘের প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় এই দুর্ঘটনা ঘটে। তখন গঙ্গায় জোয়ার থাকায় পানির স্রোত ছিল অত্যন্ত প্রবল। জানা গেছে, নিখোঁজ দুই যুবকের নাম অরূপ রায় (৩৬) ও অঙ্কুশ দাস (২৮)। তাঁরা দু’জনেই মণ্ডপের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, প্রতিমা জলে নামানোর সময় পা পিছলে গঙ্গায় পড়ে যান তাঁরা এবং তলিয়ে যান স্রোতে। খবর পেয়ে ভদ্রেশ্বর থানার পুলিশ ও দুর্যোগ মোকাবিলা দফতরের দল উদ্ধার কাজে নামে। রাত পর্যন্ত চলেছে তল্লাশি অভিযান, তবে শেষ পাওয়া খবর পর্যন্ত নিখোঁজ দুই যুবকের হদিশ মেলেনি।
একই দিনে আরেক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে হাওড়া গ্রামীণের জয়পুর থানার ঝিকিরা এলাকায়। শুক্রবার সন্ধ্যায় ঠাকুর বিসর্জন দিতে গিয়ে জলে ডুবে মৃত্যু হয় শুভদীপ সাঁতরা (১০) নামে এক কিশোরের। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঠাকুর বিসর্জন দেওয়ার পর ঘাটের ধারে দাঁড়িয়ে ছিল শুভদীপ। হঠাৎই পা পিছলে গভীর জলে পড়ে যায় সে। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয়রা উদ্ধার অভিযানে নামলেও শিশুটিকে উদ্ধার করতে সময় লাগে। দ্রুত তাঁকে জয়পুর বিবিধর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। পরিবারের একমাত্র সন্তানের এই অকাল মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছে গোটা পরিবার, এলাকায় নেমেছে শোকের ছায়া।
এদিকে, দুর্গা প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল এক মাইকম্যানেরও। ঘটনাটি ঘটেছে বর্ধমানের জামালপুরে। শুক্রবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ মণ্ডপে থাকা মাইক খুলতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় অচিন্ত্য পাল (৫০) নামে ওই মাইকম্যানের। স্থানীয়রা দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও চিকিৎসকরা আর বাঁচাতে পারেননি। জানা গেছে, মাত্র তিন দিন আগেই মারা গিয়েছিলেন অচিন্ত্যের মা। মায়ের মৃত্যুর শোক কাটতে না কাটতেই ছেলে হারিয়ে পরিবার কার্যত দিশেহারা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শান্ত স্বভাবের মানুষ ছিলেন অচিন্ত্যবাবু, দুর্গাপুজো শেষে মণ্ডপ গুটিয়ে নেওয়ার সময়ই ঘটে যায় এই দুর্ঘটনা।