মাহেশের রথ। শুধু হুগলি জেলার নয়, গোটা বাংলার কাছে পরিচিত হুগলির শ্রীরামপুরের মাহেশের রথে। আর সবথেকে আশ্চর্যের বিষয় হল একটা বাংলা প্রবাদের সঙ্গে এই মাহেশের রথের সম্পর্ক রয়েছে। রথ দেখা কলা বেচা সেই প্রবাদের কথাই বলা হচ্ছে। কথিত আছে মাহেশের রথের সঙ্গে নাকি কোথাও একটা মিল পাওয়া যায় বাংলার এই প্রবাদের।
বাংলার বিভিন্ন রথেই নানা ধরনের প্রথা প্রচলিত রয়েছে। আর শ্রীরামপুরের মাহেশের রথের সঙ্গেও স্বাভাবিকভাবেই নানা ধরনের অনুষঙ্গ জড়িয়ে রয়েছে। এই রথের থাকা জগন্নাথ দেবের সঙ্গে কলা জিলিপি সহ নানা খাবার দেওয়া হয়। আসলে জগন্নাথ দেব মাসির বাড়ি যাচ্ছেন বলে কথা। সেকারণেই তাঁর যাত্রাপথে যাতে কোনও অসুবিধা না হয় সেকারণে তাঁকে কলা, জিলিপি সহ নানা কিছু দেওয়া হয়। ভক্তরা রথের দিকে কলা ছুঁড়তে থাকেন। শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের কৃপা পাওয়ার জন্যই ভক্তদের এই পরম আকুতি। আর সেই এত কলা আসে কোথা থেকে?
আসলে মাহেশের রথের দিকে যতই এগোতে থাকবেন দেখা যাবে রাস্তার দুপাশে পশরা নিয়ে বসেছেন অনেকে। বাজছে রথের বাঁশি। আনন্দে ভরপুর গোটা এলাকা। আর সেই সঙ্গেই বিক্রি হচ্ছে কলা। সেই কলাই তো ছুঁড়তে হবে রথের দিকে। আসলে এটাই ভক্তদের বিশ্বাস। পুজো গ্রহণ করেন শ্রী জগন্নাথ। সংসার ভরে ওঠে সুখে শান্তিতে।
যে জগন্নাথদেব ভক্তদের জন্য কৃপা বর্ষণ করেন সেই জগন্নাথদেবকেই কলা অর্ঘ্য হিসাবে নিবেদন করেন ভক্তরা। তাঁর যাতে পথে খিদে না পায়। এটাই হল বিশ্বাস। যিনি জগতের অধিপতি, যিনি কোটি কোটি মানুষের ত্রাতা তাঁর খিদে নিবারণ করেন ভক্তরা। খুশি হন জগন্নাথ।
শ্রীরামপুর থেকে দূরে যে গ্রামগুলি রয়েছে সেখান থেকে বহু মানুষ আসেন মাহেশের রথে। এত ভিড়ের মধ্য়েও কোথাও যেন একবার ভগবানকে চোখের দেখা পাওয়ার জন্য এত আকুতি। দেখা দেন ভগবান। রথে চেপে যাচ্ছেন তিনি।
ভোর ৫টা থেকে অগণিত ভক্তদের ঢল নেমেছিল মাহেশে। এবারও রেকর্ড সংখ্যক ভিড় হয়েছে। উদ্য়োক্তারা জানিয়েছেন, সকলে মিলে ভক্তদের সুবিধার জন্য চেষ্টা করছেন। রথে সবার শেষে উঠেছেন জগতের পিতা জগন্নাথদেব। মাথায় সোনার মুকুট। রথের রশির টান শুরু হয়েছে বিকাল ৪টায়। এবার ৬২৮ বছরে পা দিল মাহেশের রথযাত্রা।