নতুন কোনও যুক্তি নেই। বরং মূল মামলার শুনানিতে রাজ্য সরকারের তরফে যে যুক্তি খাড়া হয়েছিল, তা রিভিউ পিটিশনের (পুনর্বিবেচনা মামলা) শুনানিতেও তুলে ধরা হচ্ছে। তাই রাজ্যের দায়ের করা রিভিউ পিটিশন খারিজ করা হোক। কলকাতা হাইকোর্টে এমনই সওয়াল করলেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের আইনজীবীরা।
ডিএ মামলায় হাইকোর্টের রায় পুুনর্বিবেচনার জন্য রাজ্যের তরফে যে আবেদন জানানো হয়েছে, গত শুক্রবার সেই মামলার শুনানিতে সওয়াল করেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের কৌঁসুলি বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং ফিরদৌস শামিম। তাঁরা সওয়াল করেন, রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় রিভিউ পিটিশনের শুনানিতে যে যুক্তি খাড়া করেছেন, তা মূল মামলার শুনানিতেও তুলে করেছিল রাজ্য। যে যুক্তির প্রভাব মূল মামলার রায়ে ছিল। তাই রাজ্যের রিভিউ পিটিশনের কোনও ভিত্তি নেই। হাইকোর্টের কাছে রিভিউ পিটিশন খারিজ করে দেওয়ার আর্জি জানান তাঁরা।
শুক্রবার সেই মামলার শুনানির পর রায়দান স্থগিত রেখেছে কলকাতা হাইকোর্টের হরিশ ট্যান্ডন এবং বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্তের ডিভিশন বেঞ্চ। রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের আশা, রায় তাঁদের পক্ষেই যাবে। বিশেষত হাইকোর্ট রিভিউ পিটিশনের শুনানির শুরুতেই বলেছিল যে রায় পুনর্বিবেচনার সুযোগ অত্যন্ত সীমিত। রাজ্য সরকারও নয়া কোনও যুক্তি খাড়া করেনি।
আরও পড়ুন: 6th Pay Commission DA: 'আইনি অধিকার, DA মামলায় জয় নিশ্চিত', আশাবাদী রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা
তারইমধ্যে সরকারি কর্মচারীদের একাংশের বক্তব্য, হাইকোর্টের রায় যদি তাঁদের পক্ষে যায় এবং তারপরও রাজ্য সরকার বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দেওয়ার টালবাহানা করে, তাহলে বৃহত্তর আন্দোলন করা হবে। কেউ কেউ ছত্তিশগড়ের রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মতো ধর্মঘটের পক্ষে সওয়াল করেছেন। আবার 'পেন ডাউন' কর্মসূচি পালনের পক্ষে সওয়াল করেছেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একাংশ।
ডিএ মামলার ইতিবৃত্ত
- মহার্ঘ ভাতার (ডিয়ারনেস অ্যালোওয়েন্স বা ডিএ) দাবিতে ২০১৬ সালের স্ট্রেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনালে (স্যাট) মামলা দায়ের করেছিল রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ।
- রাজ্য সরকারের তরফে দাবি করা হয়েছিল, ডিএ রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের আইনি অধিকার নয়। তাতে মান্যতা দিয়েছিল স্যাট।অর্থাৎ রাজ্যের জয় হয়েছিল।
- সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা। ২০১৮ সালে সেই মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
- স্যাটের রায় খারিজ করে দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত এবং বিচারপতি শেখর ববি শরাফের ডিভিশন বেঞ্চ রায় দেয়, ডিএ রাজ্য সরকারি কর্মীদের আইনি অধিকার। তা রাজ্যের দয়ার দান নয়।মামলাটি স্যাটের কাছে ফেরত পাঠিয়েছিল হাইকোর্ট।
- ২০১৯ সালে স্যাটেও ধাক্কা খেয়েছিল রাজ্য সরকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে ছয় মাসের মধ্যে বকেয়া ডিএ মেটানোর নির্দেশ দেয় স্যাট।
- যদিও স্যাটের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ফের হাইকোর্টে গিয়েছিল রাজ্য সরকার। ২০২০ সালে সেই মামলায় ফের ধাক্কা খেয়েছিল মমতার সরকার। তারপর ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছিল।
আরও পড়ুন: DA Review Petition Hearing: শুরু হল কাউন্টডাউন, শেষ বকেয়া ৩১% DA মামলার রিভিউ পিটিশনের শুনানি
- ২০২২ সালের ২০ মে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, তিন মাসের মধ্যে বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দিতে হবে। তবে সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার কয়েকদিন আগে হাইকোর্টে রিভিউ পিটিশন দাখিল করে রাজ্য সরকার। ইউনিটি ফোরাম, কনফেডারেশন এবং সরকারি কর্মচারী পরিষদের তরফে আদালত অবমাননার মামলাও দায়ের করা হয়।