কর্মী ও আধিকারিকদের উপস্থিতি নিয়ে যাতে স্বচ্ছতা বজায় রাখা যায়, তার জন্যই চালু করা হয় আধুনিক বায়োমেট্রিক অ্য়াটেনডেন্স সিস্টেম। আর, তারপরই নজরে আসে চমকে দেওয়ার মতো ঘটনা। দেখা যায়, বেতন তালিকায় নাম থাকা ৮০ জন কর্মীর স্রেফ আর কোনও হদিশ নেই!
এই ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট পুরসভায়। জানা গিয়েছে, সম্প্রতি সেখানে বায়োমেট্রিকের মাধ্যমে কর্মী ও আধিকারিকদের উপস্থিতি নথিভুক্ত করার ব্যবস্থা হয়। তারপর নির্ধারিত সময় এগিয়ে এলে মাসিক বেতন দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়।
তখনই দেখা যায়, হিসাব মিলছে না। বেতন তালিকায় নাম রয়েছে এমন ৮০ জন কর্মীর আর কোনও চিহ্ন নেই। বস্তুত, যেদিন থেকে পুরসভায় বায়োমেট্রিক চালু করা হয়েছে, সেদিন থেকেই তাঁরা আর হাজিরা দেননি!
এটা কীভাবে হল? বিরোধীদের অভিযোগ, এই ঘটনা থেকেই প্রমাণিত হয়ে গেল, বালুরঘাট পুরসভায় গণ্ডায় গণ্ডায় ভুয়ো নিয়োগ হয়েছে। সেই ভুয়ো কর্মীরাই এত দিন ধরে হাজিরা খাতায় নাম সই করতেন। এবং বেতনের সময় হলে তাঁদের ব্য়াঙ্ক অ্য়াকাউন্টে মাইনের টাকাও ঢুকে যেত। অথচ, তাঁরা কেউই পুরসভার কর্মী নন।
কিন্তু, বায়োমেট্রিক চালু হওয়ায় ওই ভুয়ো কর্মীরা আর উপস্থিতি নিয়ে কারচুপি করতে পারছেন না। ফলত, পুরসভাও আর তাঁদের খুঁজে পাচ্ছে না! বেতন দেওয়ার সময় আসতেই হাজিরা খাতার সঙ্গে বায়োমেট্রিক মিলিয়ে দেখে অসঙ্গতি ধরা পড়েছে।
এই ঘটনা যে ঘটেছে, তা মেনে নিয়েছে পুর কর্তৃপক্ষও। কিন্তু, তারা এত সহজে ভুয়ো নিয়োগের অভিযোগ মানতে চায়নি। বলা হচ্ছে, একথা ঠিক যে বায়োমেট্রিক চালু হওয়ার পর কিছু কর্মী তাঁদের উপস্থিতি নথিভুক্ত করতে পারেননি।
এখন প্রশ্ন হল, একসঙ্গে ৮০ জন কর্মী টানা এত দিন ধরে হাজিরা দিচ্ছেন না। এটাকে কিছু কর্মীর হাজিরা না দিতে পারা সংক্রান্ত সমস্য়া বলা যায় কি? এই যুক্তি পুর কর্তৃপক্ষও মেনে নিয়েছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে। তারা আশ্বাস দিয়েছে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
এদিকে, বিরোধীদের বক্তব্য হল, এসব বললে হবে না। এত দিন কীভাবে ওই ৮০ জন কর্মী হাজিরা খাতায় নাম লিখে গেলেন। কেন এবং কাদের 'কল্য়াণে' তাঁদের অ্য়াকাউন্টে বেতনের টাকা ঢুকল, কোন অ্য়াকাউন্টে সেই টাকা গেল - এই সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ সময় ধরে বামেদের দখলে থাকার পর ২০১৩ সালে বালুরঘাট পুরসভায় ঘাসফুল ফোটায় তৃণমূল কংগ্রেস। তারপর থেকে বহুবার ভুয়ো নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে, এবার ৮০ জন 'কর্মী'কে বেতন না দিতে হওয়ায় পুরসভার সাশ্রয় হয়েছে প্রায় ১২ লক্ষ টাকা!