বাবা ও মেয়ে দুজনেই চিকিৎসক। ট্রেনে করেই যাচ্ছিলেন চেম্বারে। আর সেখানে যাওয়ার পথে বাবার সামনেই ভয়ঙ্কর কাণ্ড করে বসলেন মেয়ে। চলন্ত ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হলেন ওই তরুণী চিকিৎসক। ঘটনাটি ঘটেছে শিয়ালদা দক্ষিণ শাখার সুভাষগ্রাম স্টেশন পার করার ঠিক পরেই। আত্মঘাতী চিকিৎসকের নাম সংগীতা পাল (৩৫)। চোখের সামনে মেয়েকে ঝাঁপ দিতে দেখে নির্বাক হয়ে যান বাবা অলোক পাল। এই ঘটনায় শোকের ছায়া নেমেছে চিকিৎসকের পরিবারে।
আরও পড়ুন: আত্মহত্যা নিয়ন্ত্রণে কলকাতা মেট্রোর বিশেষ ফ্লেক্স, প্রত্যেক স্টেশনে থাকছে বার্তা
জানা গিয়েছে, চিকিৎসকের বাড়ি ইএম বাইপাস সংলগ্ন আনন্দপুরের মাদুরদহ এলাকায়। অলোক পাল একজন শিশু বিশেষজ্ঞ। আর মেয়ে জেনারেল ফিজিশিয়ান। ডায়মন্ড হারবারে চেম্বার রয়েছে অলোক বাবুর। প্রতিদিন সকালে মেয়েকে নিয়ে ট্রেনে করে তিনি চেম্বারে যান। মঙ্গলবারও একইভাবে দুজনে চেম্বারে যাচ্ছিলেন। ট্রেনে যাওয়ার সময় অলোক বাবু অন্যান্য সহযাত্রীদের সঙ্গে গল্প করছিলেন। সেই সময় সুভাষগ্রাম স্টেশন পার করতেই দরজার সামনে চলে যান সংগীতা এবং আচমকা ঝাঁপ দিয়ে দেন। এই ঘটনার পরেই পরবর্তী স্টেশনে নেমে জিআরপি সঙ্গে যোগাযোগ করেন অলোক বাবু। ঘটনায় জিআরপির তরফে তরুণী চিকিৎসকের মৃতদেহ উদ্ধার করে এনআরএস হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে তাঁর দেহের ময়না তদন্ত করা হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সংগীতা পালের দীর্ঘদিন ধরেই মানসিক সমস্যা রয়েছে। প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি এই সমস্যায় ভুগছেন। ২০০৯ সাল থেকে মানসিক অবসাদ সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে সংগীতার। তবে এই অবস্থার মধ্যেই তিনি ২০১৯ সালে এমবিবিএস উত্তীর্ণ হন এবং রেজিস্ট্রেশন নম্বর পেয়ে যান। মেয়ে যাতে একাকীত্বে না থাকে তার জন্য তাঁকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিদিন চেম্বারে যেতেন অলোক বাবু। তাঁর পাশাপাশি সংগীতা রোগী দেখতেন।
আর মানসিক সমস্যার কারণে মেয়ের বিয়েও দিতে পারেননি। এর জন্য তার চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু, ক্রমেই মানসিক সমস্যাও তাঁর বাড়তে থাকে। এর আগে সম্প্রতি বাড়িতে নিজেকে ঘরবন্দি করে রেখেছিলেন সংগীতা। তা নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন তারা। পরে খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ যায়। কিন্তু, পুলিশকেই পালটা হুমকি দেন সংগীতা। রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার নিউ গড়িয়া স্টেশন থেকে বাবা ও মেয়ে ট্রেনে চেপেছিলেন। আর তারপরই এই ঘটনা। এই ঘটনায় চিকিৎসক পরিবারে শোকের ছায়া নেমেছে। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ।