ঘরের ছেলে অবশেষে ঘরে ফিরল। তবে, তার মাঝেই কেটে গিয়েছে পাক্কা ১৮টা বছর! এমনকী, সরকারি নথি অনুসারে তাঁকে মৃত বলেও ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে! এহেন 'মৃত' মানুষ হঠাৎ করে ঘরে ফিরলে পরিবারের বাকি সদস্যরা যে একইসঙ্গে বিহ্বল ও আবেগে আপ্লুত হয়ে উঠবেন, সেটাই তো স্বাভাবিক। শুক্রবার রাতে তেমনই এক আপাত অসাধারণ ঘটনার সাক্ষী থাকলেন পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির বাসিন্দারা।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, যাঁকে নিয়ে এত ঘটনার ঘনঘটা, তাঁর নাম ইসমাইল আলি খান ওরফে খোকন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ১৮ বছর আগে কাজ পেয়ে ভিনরাজ্যে গিয়েছিলেন তিনি। তখন খোকন ৩২ বছরের তরুণ। কিন্তু, সেই যে তিনি গেলেন, এত দিন আর ফিরে আসেননি নিজের বাড়িতে, পরিবারের কাছে।
পরিবারের সদস্যরা তাঁর খোঁজ করেছিলেন বহু দিন ধরে। কিন্তু, তাতেও কোনও লাভ হয়নি। ইসমাইল নিখোঁজ হওয়ার পর যখন প্রায় ১০ বছর কেটে যায়, তখন ধরে নেওয়া হয়, তিনি মারা গিয়েছেন। এরপর সরকারিভাবে তাঁর নামে ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু করে দেওয়া হয় এবং তা পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলেও দেওয়া হয়।
বেদনাদায়ক সেই ঘটনার আট বছর পর অবশেষে নিজের ঘরে ফিরলেন ইসমাইল ওরফে খোকন। এখন তাঁর বয়স প্রায় ৫০। তার উপর শরীরে দীর্ঘ অসুস্থতার ছাপ স্পষ্ট। ফলত, হারিয়ে যাওয়া বত্রিশের সেই তরুণের সঙ্গে সদ্য প্রৌঢ়ত্বে পা দেওয়া ইসমাইলের চেহারায় কিছু ফারাক তো রয়েছেই। তবে, এই ভোলবদল এতটাও প্রবল নয় যে কাছের মানুষরা তাঁকে চিনতে পারবেন না। বস্তুত, তাঁরা তাঁদের ঘরের লোককে চিনতে পেরেছেন এবং তাঁকে ফের একবার আপন করে নিয়েছেন।
যাঁরা ইসমাইলকে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন, তাঁরা সকলেই মুম্বইয়ের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য। তাঁদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, ভিনরাজ্যে যাওয়ার পর যেকোনওভাবেই হোক মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন ইসমাইল। সেই সময় মুম্বইয়ের একটি সরকারি হাসপাতালে ভবঘুরের মতো ঘুরে বেড়াতেন তিনি।
সেখান থেকেই তাঁকে উদ্ধার করেন মুম্বইয়ের ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। এরপর তাঁরাই বেশ কয়েক বছর ধরে ইসমাইলের চিকিৎসা করান। ধীরে ধীরে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। স্মৃতি ক্রমে ফিরতে শুরু করে। নিজের পরিচয়, বাড়ি, গ্রামের কথা বলতে শুরু করেন। শেষে উদগ্রীব হয়ে ওঠেন বাড়ি ফেরার জন্য।
এরপর ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের সহযোগিতায় মুম্বইয়ের ওই সংগঠনের সদস্যরা ইসমাইলকে নিয়ে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে যান। জানা গিয়েছে, ইসমাইলের আরও চিকিৎসার প্রয়োজন। আগামী দু'বছর মুম্বইয়ের সংশ্লিষ্ট স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনই তাঁর চিকিৎসা চালাবে।