আবার বাংলা দেখল এক অমানবিক ছবি। অ্যাম্বুল্যান্স পাননি কালিয়াগঞ্জের এক বাসিন্দা। এরপরই সেই অসহায় বাবা তাঁর মৃত সন্তানকে ব্যাগে ভরে ফেলেন। এরপর সেই দেহ নিয়ে তিনি শিলিগুড়ি থেকে রায়গঞ্জে চলে আসেন। এরপর সেখান থেকে বেসরকারি বাসে চেপে কালিয়াগঞ্জ। দীর্ঘ পথ। সেই পথ তিনি এভাবেই মৃত সন্তানকে ব্যাগে ভরে নিয়ে আসেন। কিন্তু কেন তিনি এমন করলেন?
সূত্রের খবর, কালিয়াগঞ্জ ব্লকের মুস্তাফানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের ডাঙিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা অসীম দেবশর্মা। নেহাতই গরিব দিনমজুর। তাঁর পাঁচ মাসের দুই যমজ সন্তান অসুস্থ হয়ে পড়েয তাদের উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শনিবার রাতে সেই শিশুর মধ্য়ে একজনের মৃত্যু হয়। কিন্তু সেই মৃত সন্তানকে তিনি বাড়ি নিয়ে যাবেন কীভাবে?
তাঁর দাবি অ্য়াম্বুল্যান্স চালক তাঁর কাছ থেকে আট হাজার টাকা চেয়েছিলেন। কিন্তু অত টাকা তিনি কোথা থেকে পাবেন? এরপরই তিনি কোনও উপায় না দেখে মৃত শিশু সন্তানকে ব্যাগে পুরে ফেলেন। এরপর বেরিয়ে আসেন হাসপাতাল চত্বর থেকে। ভোরের সরকারি বাসে তিনি সেই সন্তান সহ উঠে পড়েন। হয়তো সরাসরি দেহ নিয়ে তাঁকে এভাবে বাসে উঠতে দেওয়া হত না। বাধ্য় হয়েই তিনি ব্যাগের মধ্য়ে সন্তানকে ভরে তিনি উঠে পড়েন বাসে। এরপর দীর্ঘপথ তিনি এভাবেই আসে। বুকে সন্তান হারানোর তীব্র যন্ত্রণা। সেই যন্ত্রণাকে সঙ্গে নিয়েই তিনি বেরিয়ে পড়েন। কাউকে বুঝতে দেননি। যদি বাস থেকে নামিয়ে দেয়! সেই আশঙ্কায় তারা আর কাউকে কিছু বলেনি।
এরপরই তিনি কালিয়াগঞ্জে ফিরে আসার পরে গোটা বিষয়টি তিনি জানান। ব্যাগ খুলতেই দেখা যায় ব্যাগের মধ্য়ে মৃত শিশু। কালিয়াগঞ্জে নামার পরে তিনি গোটা বিষয়টি জানান। কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। কালিয়াগঞ্জে ফিরে তিনি জানান, চিকিৎসা করাতে গিয়ে সব শেষ হয়ে গিয়েছে। ১৬ হাজার টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। অ্যম্বুল্যান্স ৮ হাজার টাকা চেয়েছিল। সেকারণে বাসে করেই মৃত সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ফিরেছি।
এরপর বিজেপি নেতৃত্ব গোটা বিষয়টি জানার পরে অ্য়াম্বুল্যান্স করে মৃত শিশু ও তার বাবাকে কালিয়াগঞ্জের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু গোটা ঘটনায় উঠছে একাধিক প্রশ্ন। পাঁচ ঘণ্টা তিনি বাসে করে মৃত সন্তানকে ব্যাগের মধ্যে নিয়ে এলেন। একজন বাবা হিসাবে এর থেকে বড় কষ্টের আর কী হতে পারে!