গত কয়েকদিন ধরে আধার অনিশ্চয়তায় ভুগতে শুরু করে বাংলা। একাধিক জেলায় বহু মানুষের আধার নিষ্ক্রিয় করা হয়। সেই মতো চিঠি পাঠানো হয় অনেককেই। এমনই একটি চিঠি গিয়েছিল পশ্চিম বর্ধমান জেলার কাঁকসা বনকাটি পঞ্চায়েতের বাসিন্দা এক পড়ুয়ার কাছে। অবশ্য হাতে চিঠি পাওয়ার আগেই আধার নিষ্ক্রিয় হওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছিলেন সেই পড়ুয়া। জানা যায়, সেই পড়ুয়ার নাম আশা বিশ্বাস। বীরভূমের কবি জয়দেব মহাবিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রী তিনি। পরীক্ষর ফর্ম ফিলআপ করতে গিয়ে জানতে পারেন, তাঁর আধার নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। পরেরদিন তাঁর হাতে চিঠি আসে। এর জেরে তাঁর পরীক্ষায় বসা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। তবে সেই পড়ুয়াকে এবার পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হয়েছে। এর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়া ঘোষণা করেছিলেন, আধার নিষ্ক্রিয় হলেও রাজ্যের কোনও বাসিন্দাকে সমস্যায় পড়তে হবে না। এই আবহে মঙ্গলবার কলেজে গিয়ে নিজের সমস্যার কথা জানিয়ে পরীক্ষায় বসার আবেদন জানান আশা। এই আবহে তাঁকে পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। (আরও পড়ুন: আধার নিষ্ক্রিয়তার 'কোপ' মতুয়াদের ওপর, ঠাকুরবাড়িতে খুলল সহায়তা ক্যাম্প)
এদিকে আধার নিষ্ক্রিয় হওয়ার বিষয়টিকে 'যান্ত্রিক ত্রুটি' আখ্যা দিয়ে অবশ্য অভয় প্রদানের চেষ্টা করেন বিজেপি নেতারা। আর এরই মধ্যে জানা গেল, মঙ্গলবার থেকে অনেকের নিষ্ক্রিয় থাকা আধার কার্ড ফের কাজ করতে শুরু করেছে। তবে এর মধ্যেও অনেকে অভিযোগ করলেন, আধার সক্রিয় হলেও যাচাই করতে গিয়ে প্রথমে সমস্যায় পড়তে হয়েছে অনেককে। তবে শেষ পর্যন্ত আধার সক্রিয় হওয়ায় অনেকেই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন। যদিও এখনও বিতর্ক শেষ হচ্ছে না।
এদিকে এই ইস্যুর সমাধানে মঙ্গলবার থেকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি চ্যাটবট (৯০৮৮৮৮৫৫৪৪) চালু করে রাজ্য সরকার। সেই চ্যাটবটের মাধ্যমে নাকি অন্তত ১৫০ জন মানুষ তাদের আধার নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ জানিয়েছে রাজ্য সরকারের কাছে। জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকারের নির্দেশে আধার নিষ্ক্রিয়তার সমস্যায় ভুক্তভোগী সব নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। যাতে কোনও নাগরিক পরিষেবা থেকে বঞ্চিত না হন, সেই চেষ্টাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, আধার নিষ্ক্রিয় হওয়ার ঘটনায় বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই বাংলার সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। জেলায় জেলায় বহু মানুষের কাছে ইউআইডিএআই-এর তরফ থেকে চিঠি যাচ্ছে। তাতে বলা হচ্ছে, আধার আইনের ২৮এ ধারার অধীনে আধার নিষ্ক্রিয় করা হচ্ছে। এই বিতর্কের আবহে ময়দানে নামেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দাবি করেন, লোকসভা নির্বাচনের আগে 'ভোট কাটতে' বিজেপি ইচ্ছে করে আধার নিষ্ক্রিয় করছে বহু মানুষের। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার আলাদা পদক্ষেপ করেছে। এই সবের মাঝেই 'সিএএ'-কে হাতিয়ার করা বিজেপি শঙ্কিত হয়। শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদার, শান্তনু ঠাকুররা ময়দানে নামেন। শুভেন্দু দাবি করেন, চক্রান্ত হচ্ছে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে নাকি নিষ্ক্রিয় হয়েছে কিছু আধার। অপরদিকে শান্তনু ঠাকুর গোটা ঘটনায় ক্ষমা চেয়ে নেন। সঙ্গে নিজের ফোন ও ইমেল আইডি দিয়ে আধার নিষ্ক্রিয় হওয়া ব্যক্তিদের যোগাযোগ করতে বলেন। আর গত সোমবার সুকান্ত বলেছিলেন, মঙ্গল সকালের মধ্যে সবার আধার আবার সক্রিয় হবে। তবে মঙ্গলে বাংলার আরও বহু মানুষ আধার নিষ্ক্রিয়তার চিঠি পান। আর মঙ্গলেই বাংলার সরকারের তরফে চালু করা হয়েছে আধার নিষ্ক্রিয়ার অভিযোগ জানানোর পোর্টাল। এর মাঝে ধীরে ধীরে কিছু কিছু নিষ্ক্রিয় আধার ফের সক্রিয় হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।