কয়লা পাচার কাণ্ডে বারবার নাম জড়িয়েছে তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এই মামলায় ইডি-র জেরার মুখোমুখি হয়েছেন অভিষেক। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তদন্তকারীরা অভিষেকের বাড়িতে এসে তাঁর স্ত্রী রুজিরাকেও জেরা করেছেন। এবার আসানসোলের মাটিতে দাঁড়িয়ে সেই কয়লা পাচার কাণ্ড নিয়েই সরব অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং অভিষেকের নিশানায় ছিলেন বিজেপি নেতা তথা পাণ্ডবেশ্বরের প্রাক্তন বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি। আসানসোলের প্রাক্তন মেয়রকে 'সবচেয়ে বড় কয়লা মাফিয়া' বলে আখ্যা দেন অভিষেক। যদিও নিয়ের ভাষণে একবারও জিতেন্দ্রর নাম নেননি তিনি। তবে অভিষেক দাবি করেন, ২০২১ সালের পর বিজেপি ছেড়ে ফের একবার তৃণমূল কংগ্রেসে ফিরতে চেয়েছিলেন জিতেন্দ্র।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের নির্বাচনের আগে শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি। তার আগে দফায় দফায় ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে তাঁর মদভেদ সামনে এসেছিল। তবে সেই সময় আসানসোলের তৎকালীন সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়র আপত্তিতে বিজেপিতে আসা হয়নি জিতেনের। বাবুলের অভিযোগ ছিল, জিতেন্দ্র তিওয়ারি কয়লা পাচারের সঙ্গে যুক্ত। পরে তিনি তৃণমূলে ফিরে গিয়েছিলেন। তবে সেই 'ঘর ওয়াপসি'র পরই দিলীপ ঘোষের হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দেন জিতেন্দ্র। বিধানসভা নির্বাচনে পদ্ম শিবিরের টিকিটে লড়াই করেন। তবে হেরে যান ভোটে। এদিকে মন্ত্রিত্ব হারিয়ে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন বাবুলও। নির্বাচনের পর বিজেপির হয়ে সেভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়নি জিতেনকেও। তবে পুরভোটে তাঁর স্ত্রীকে টিকিট দেয় বিজেপি। ফের ধীরে ধীরে বিজেপির হয়ে সক্রিয় হন জিতেন্দ্র। এহেন জিতেনের বিরুদ্ধে এবার কয়লা পাচার কাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগ করলেন অভিষেক।
বুধবার পাণ্ডবেশ্বরের লাউদোহা ফুটবল মাঠে জনসভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় অভিষেক বলেন, 'বিধানসভা ভোটের আগে ইডি সিবিআই দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিল বিজেপি। এদিকে পাণ্ডবেশ্বরের যে প্রাক্তন বিধয়ক এখানের সবচেয়ে বড় কয়লা চোর ছিল, তাকেই দলে নিয়েছিল বিজেপি। আর সেই দল নাকি করবে কয়লা চুরির তদন্ত।' অভিষেক আরও বলেন, '২০২১ সালের নির্বাচনে বিজেপি হেরে যাওয়ার পর বহু নেতাদের ধরে তৃণমূল কংগ্রেসে ফিরে আসার জন্য চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাঁর জন্য তৃণমূলের দরজা চিরতরে বন্ধ।' বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশীর সঙ্গেও কয়লা মাফিয়াদের যোগাযোর রয়েছে বলে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন অভিষেক। এদিকে সদ্য নিহত কয়লামাফিয়া তথা ২০২১ সালে বিজেপিতে যোগ দেওয়া রাজু ঝাঁয়ের কথাও বলেছিলেন অভিষেক।
এদিকে অভিষেকের এই আক্রমণের পালটা জবাব দিয়েছেন বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারিও। তিনি দাবি করেন, সাহস থাকলে নাম নিয়ে বলুক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, 'প্রাক্তন বিধায়ক তো অনেকেই আছেন। সিপিএম, কংগ্রেসেরও প্রাক্তন বিধায়ক আছেন। আমা কে নিয়ে না ভেবে উনি এটা বের করুন যে কেন তাঁর দলের বিধায়কদের গ্রামে গ্রামে চোর স্লোগান শুনতে হচ্ছে।'