বাঁকুড়ার রবীন্দ্রভবনে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলার কার্যকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক সেরে বৃহস্পতিবার মধ্যাহ্নভোজ সারতে আদিবাসী গ্রাম চতুরডিহিতে হাজির হন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ওই গ্রামের বাসিন্দা আদিবাসী বিভীষণ হাঁসদার বাড়িতে ঢোকার মুখে পরিবারের মহিলারা তাঁকে বরণ করে নেন। স্লোগান ওঠে, ‘বন্দেমাতরম’। তাঁর জন্য একাধিক নিরামিষ পদের ব্যবস্থা এদিন করে রেখেছিলেন হাঁসদা পরিবার। কিন্তু খাওয়াদাওয়া শেষে উপরি পাওনা হিসেবে যে তিনি ‘মায়ের ভালবাসা’ও পাবেন তা হয়তো ভাবেননি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
এদিন ওই মাটির বাড়ির দাওয়ায় কৈলাস বিজয়বর্গীয়, দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিনহা, মুকুল রায়কে পাশে নিয়ে কলার পাতায় পাত পেড়ে খেলেন অমিত শাহ। তাঁর একেবারে পাশে বাড়ির কর্তা বিভীষণ হাঁসদাকে বসিয়েছিলেন তিনি। মেনুতে ছিল ভাত, রুটি, বিউলির ডাল, আলুভাজা, আলুপোস্ত, পোস্তর বড়া, চাটনি, পাপড়, মিষ্টি ইত্যাদি। অনেকক্ষণ ধরে বেশ আয়েশ করেই খান তিনি। ২–৩টি রুটির পাশাপাশি হাত দিয়ে মেখে ভাতও খান। তবে মিষ্টি অর্থাৎ বাংলার রসগোল্লা এদিন খাননি বর্ষীয়ান ওই রাজনীতিবিদ। মিষ্টি না খেলেও বাংলার মেয়ের ‘মিষ্টি’ যত্ন তিনি পেলেন।
খাওয়া–দাওয়া শেষে হাত ধুইয়ে দেওয়ার পর তোয়ালে এগিয়ে দেন গ্রামের এক আদিবাসী মেয়ে। অমিত শাহকে নিজে হাত মুছতে দেখে ওই তরুণী খুব সরলভাবে বলেন, ‘দাও আমি মুছিয়ে দিই।’ এর পরই তিনি তোয়ালে দিয়ে যত্ন নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাত ও মুখ মুছিয়ে দেন। তখন হালকা একটা প্রসন্ন হাসি দেখা যায় অমিত শাহর মুখে। খাওয়া–দাওয়ার পর এ যেন এক আলাদা তৃপ্তি। যেন তিনি অনেক কিছু পেলেন। পাশে ছিলেন দিলীপ ঘোষ। হিন্দিতে তিনি বলে ওঠেন, ‘মা কা প্যায়ার’ অর্থাৎ ‘মায়ের ভালবাসা’।
খাওয়া–দাওয়া শেষে ‘মায়ের মতো’ যত্ন–নেওয়া ওই তরুণীকে ডেকে হাতে ভালাবাসা স্বরূপ ৫০০ টাকার একটা নোট দেন মন্ত্রী অমিত শাহ। মন্ত্রীকে প্রণাম করে তাঁর আশীর্বাদ নেন ওই তরুণী। এর পর বাড়ির কর্তা বিভীষণবাবুকে উত্তরীয় পরিয়ে ধন্যবাদ জানান মন্ত্রী। ওই পরিবার ও গ্রামবাসীদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটিয়ে ফের বাঁকুড়া রবীন্দ্রভবনের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েন অমিত শাহ। তবে মন্ত্রীর আগমনের উৎসবের রেশ এখনও রয়ে গিয়েছে বাঁকুড়া চতুরডিহি গ্রামের ওই মাটির বাড়িতে।