প্রায় ৬ মাস পর পর্যটকদের জন্য দরজা খুলেছে পাহাড়। সরকারি নির্দেশে দার্জিলিং, কালিম্পংয়ে খুলে গিয়েছে হোটেল, রেস্তোরাঁ। এবার একই পথে হাঁটতে চলেছে পার্শ্ববর্তী পাহাড়ি রাজ্য সিকিম। জানা গিয়েছে, অক্টোবর থেকে সিকিম তার পথ খুলে দেবে ভ্রমণপিপাসুদের কাছে।
প্রতি বছর পাহাড়ে ঘেরা এই পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে ১০ লাখেরও বেশি পর্যটক হাজির হয়। কিন্তু এ বছর করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউনের জেরে মার্চ মাস থেকে বন্ধ ছিল শৈল শহরগুলি। ১৬ মার্চ প্রথম রাজ্যে পর্যটকদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করে সিকিম।
৪ সেপ্টেম্বর সিকিমে হোটেল মালিক, পর্যটন ও পরিবহণ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন পর্যটন দফতরের আধিকারিকরা। অক্টোবরে পর্যটকদের জন্য সিকিমের দরজা খুলে দেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা হয় বৈঠকে। তাতে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, আগে থেকে বুকিং করা রয়েছে বা কোনও ট্যুর প্যাকেজ রয়েছে এমন দেশীয় পর্যটকদের আপাতত সিকিমে ঢুকতে দেওয়া যাবে। এবং সে ক্ষেত্রে পর্যটকদের করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট দেখাতে হবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
৫ সেপ্টেম্বর দার্জিলিং, কার্শিয়াং, কালিম্পং, মিরিকে হোটেল এবং রেস্তোরাঁ খোলার অনুমতি দেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার। সে ক্ষেত্রে কঠোরভাবে প্রত্যেককে সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিষেবা দিতে হবে। স্বাস্থ্য–নিয়ম মানতে হবে পর্যটকদেরও। তবে যে সব এলাকা কন্টেনমেন্ট জোনের আওতাভুক্ত বা করোনা আক্রান্তের হদিশ পাওয়া গিয়েছে সে সব এলাকায় কোনও হোটেল বা রেস্তোরাঁ আপাতত খোলা যাবে না বলে জানানো হয়েছে।
দার্জিলিং হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাঙ্গে শেরিং ভুটিয়া বলেন, ‘আমরা আশা করছি এবার ধীরে ধীরে পর্যটকরা পাহাড়ে আসতে শুরু করবেন। আমার ধারণা, পর্যটন শিল্প আগে যেমন ছিল ঠিক সেরকম স্বাভাবিক অবস্থায় সময়ের সঙ্গে ফিরে আসবে।’ উল্লেখ্য, পাহাড়ের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মেরুদণ্ড পর্যটন। প্রায় ১৫% জনগোষ্ঠী তাদের জীবিকার জন্য পর্যটন শিল্পের ওপর নির্ভরশীল।
উল্লেখ্য, রাজ্যে সর্বনিম্ন করোনা সংক্রমণের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কালিম্পং। দার্জিলিংয়েও অ্যাকটিভ কেসের সংখ্যা খুবই কম। ৮ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ মঙ্গলবারের স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, কালিম্পংয়ে অ্যাকটিভ কেসের সংখ্যা মাত্র ৬৪, যেখানে কলকাতায় সেই সংখ্যা ৪০৬৭। হোটেল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পর্যটকরা আসতে শুরু করলে হোটেলে কীভাবে স্যানিটাইজেশন করে স্বাস্থ্যবিধি মানা হবে তা আমরা ঠিক করে রেখেছি।
প্রথম সারির এক হোটেলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডায়মন্ড ওবেরয় বলেন, ‘কোনও পর্যটক ঘর ছাড়লেই সেটি সঙ্গে সঙ্গে স্যানিটাইজ করা হবে। তিনদিন ফাঁকা রাখার পরই ওই ঘর অন্য পর্যটককে দেওয়া যাবে। ঘর দেওয়ার আগে তাঁদের শারীরিক তাপমাত্রা যাচাই করে নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। হোটেলের প্রত্যেক কর্মীকে মাস্ক ও গ্লাভস পরে থাকতে হবে। প্রতিদিন পুরো হোটেল স্যানিটাইজ করা হবে। এবং কোনওরকম বুফে পরিষেবা থাকবে না।’
ইতিমধ্যে নিউ জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং, কালিম্পংয়ে সবরকম পরিবহণ ব্যবস্থা শুরু হয়ে গিয়েছে। হিমালয়ান ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন কমিটির সভাপতি এস এন প্রধান জানান, বেশিরভাগ পর্যটকই শিলিগুড়ি বাস স্ট্যান্ড বা নিউ জলপাইগুড়ি রেলস্টেশন থেকে বাসে বা শেয়ার করা জিপে পাহাড়ে ঘুরতে যায়। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট চালকদের শারীরিক দূরত্ব মেনে চলতে বলা হয়েছে। এবং করোনা পরিস্থিতির আগে যত যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করা হত এবার তার অর্ধেক নিতে বলা হয়েছে।
আপাতত আগরতলা–দিল্লী রাজধানী এক্সপ্রেস, ব্রহ্মপুত্র মেল এবং পদাতিক এক্সপ্রেস মিলিয়ে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে ৭টি দূরপাল্লার ট্রেন চালানো হচ্ছে। উত্তর–পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক শুভায়ন চন্দ জানিয়েছেন, ১২ সেপ্টেম্বর থেকে আরও ট্রেন চলাচল করবে বলে আশা করা যায়।