রাজ্যপালকে নয়, বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে আক্রমণ করেছেন রাজ্যের কারামন্ত্রী অখিল গিরি। এমনই দাবি মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠদের। মঙ্গলবার সবাইকে পুরো ভাষণ শোনার অনুরোধ করেন অখিলবাবু। এর পর সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যমের সোশ্যাল মিডিয়া পেইজে ভাষণটি খুঁজে বার করে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা। প্রায় ১৪ মিনিটের ভাষণে মনে হয়েছে, শুভেন্দুকে আক্রমণ করতে গিয়ে সর্বনাম ব্যবহারের ঘনঘটায় যাবতীয় বিভ্রান্তি। অখিলবাবুর ঘনিষ্ঠদের যদিও দাবি, রাজ্যপালকে নয়, বিরোধী দলনেতাকে নাম না করে আক্রমণ করেছেন কারামন্ত্রী।
সোমবার সোশ্যাল সাইটে একটি চিঠি ও একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করেন বিরোধী দলনেতা। তাতে অখিল গিরিকে রাজ্যপালকে উদ্দেশ করে কিছু কথা বলতে শোনা যায়। চিঠিতে বিরোধী দলনেতা দাবি করেন, রাজ্যপালকে কুরুচিকর আক্রমণ করেছেন অখিল গিরি তাই রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের উচিত তাঁকে বরখাস্ত করতে সরকারকে সুপারিশ করা।
অখিল গিরির ওই বক্তব্যে মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, এই বক্তব্য অনভিপ্রেত। এটাকে ভালো ভাবে নিচ্ছি না। এর পরই অখিলবাবু বলেন, সবাইকে গোটা ভাষণটা শুনতে অনুরোধ করছি।
মন্ত্রীর অনুরোধে সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যমের সোশ্যাল মিডিয়া পেইজে ভাষণটি খুঁজে বার করে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা। গোটা ভাষণটিতে প্রায় আড়াই মিনিট শুভেন্দু অধিকারীকে আক্রমণ করেন তিনি। তবে কোথাও শুভেন্দু অধিকারীর নাম নেননি তিনি। সর্বনাম ব্যবহার করে বোঝাতে চেয়েছেন বিরোধী দলনেতাকে। শুধুমাত্র একবার বলেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের নাম। অখিল গিরির ঘনিষ্ঠদের দাবি, রাজ্যপালকে নয়, শুভেন্দু অধিকারীকে আক্রমণ করেছেন কারামন্ত্রী।
অখিলবাবু যা বলতে চেয়েছেন তা হল, রাজ্যপালের হোয়াটসঅ্যাপে শুভেন্দু অধিকারীর সম্পর্কে কোনও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। শুভেন্দু অধিকারীকে রক্ষা করতে তিনি জনৈক তৃণমূল মুখপাত্রের পুজো উদ্বোধনে গিয়েছিলেন। এমনকী ১০০ দিনের কাজের টাকা নিয়ে কথা বলতে ১০ নভেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিনি।
অখিল গিরি বলেন, ‘বলছে না কি জেলখানায় ক্যাবিনেট মিটিং বসবে। লজ্জা করে না এই কথা বলার? একটা লোক সেলুনে যখন চুল কাটে তার চুল কাটাটা ঠিক হয়েছে কি না পিছনে আয়না দিয়ে দেখে। সেলুনের আয়নার মতো আপনার পিছনে ফেলে আসা দিনগুলো দেখুন। কী ছিল আপনার?’
কিছুটা থেকে কারামন্ত্রী বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী ঠিক কথাই বলেছেন। আমি জানি না দিঘা ডেভেলপমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যান কে ছিল? আমরা জানি সব। কোথায় কী হয়েছে আমরা সব জানি। ভারতীয় জনতা পার্টিকে বলছি, বেশি বক্তৃতা করার দরকার নেই। পাবে তো লাকসভায় ৫ – ৬টা আসন। তোমার পার্টি পর্যবেক্ষণ করে বলেছে ৯টা সিট। আমরা বলিনি।’
এর পর তিনি বলেন, ‘এত হম্বিতম্বি কীসের? আমরা পারি না না কি? আমরা পারি তোমার কলার ধরে ১০ মিনিটে জেলে ঢুকিয়ে দিতে পারি। আমাদের কাছে যা কাগজ আছে। নবান্নতে যা কাগজ আছে। আমরা দেখছি। আমাদের হাতেও কাগজপত্র আছে।’
এর পর রাজ্যপালের নাম নিয়ে তিনি বলেন, ‘সিভি আনন্দ বোসের ব্যাপারটা আমরা জানি না না কি? কেন কুণাল ঘোষের পুজো উদ্বোধন করতে গেছে আমরা জানি না না কি? হোয়াটসঅ্যাপে কী আছে তোমার? তুমি কেন মুখ্যমন্ত্রীকে ১০ তারিখে ১০০ দিনের কাজের টাকা নিয়ে আলোচনা করতে ডেকেছ আমরা জানি না? হোয়াটসঅ্যাপে আছে। তোমার কলঙ্ক আমরা ধরব। ছাড় পাবে না আমাদেরও IB আছে আমাদের পশ্চিমবঙ্গের। আমাদেরও ফাইল রেডি।’ আড়াই মিনিটের এই বক্তব্যে মাত্র ১ বার রাজ্যপালের নাম নিয়েছেন অখিল গিরি। বাকিটা পুরোটাই চালিয়েছেন সর্বনাম দিয়ে। মন্ত্রীর অনুগামীদের দাবি এতেই তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি।
অখিলবাবুর অনুগামীদের দাবি সঠিক হলেও রাজ্যপালকে তুমি বলে সম্মোধন করাকে শালীনতার অতীত বলে মনে করছে সুশীল সমাজের একাংশ। সাংবিধানিক পদ নিয়ে কথা বলার সময় মন্ত্রীর সতর্ক থাকা উচিত ছিল বলে মনে করছেন তাঁরা।