সমবায় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়াল পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে। বোমাবাজি, অগ্নিসংযোগ, হাতাহাতি বাদ গেল না কিছুই। রবিবার বেলার দিকে এই ঘটনায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয় নন্দীগ্রাম ১নং ব্লকের কাঞ্চননগর গ্রামে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে গেলে পুলিশের সামনেই রীতিমতো বোমাবাজি চলতে থাকে। ঘটনাস্থলে যান তমলুকের প্রাক্তন সাংসদ তথা বিজেপি নেতা দিব্যেন্দু অধিকারী। পুলিশের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। এই ঘটনার জেরে ভোট গ্রহণ বেশ কিছু সময়ের জন্য স্থগিত হয়ে যায়। যদিও পুলিশের দাবি, পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
আরও পড়ুন - '৪ দিনে কলকাতা দখলের' জবাব- 'বাংলাদেশ সেনার জন্য সিভিক ভলান্টিয়াররাই যথেষ্ট'
পড়তে থাকুন - তন্ময় ভট্টাচার্যকে নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নিল সিপিএম? তদন্ত কমিটির ভূমিকায় ধোঁয়াশা
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তমলুকের জনপ্রিয় এগ্রিকালচার সোসাইটির নির্বাচন আয়োজিত হচ্ছে জেলা জুড়ে। এই নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল ও বিজেপি সমর্থিত প্রার্থীরা। নন্দীগ্রামে এই সমবায়ের ৭টি আসন রয়েছে যেখানে সব মিলিয়ে ২২ জন প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নন্দীগ্রামে এই সমবায়ের নির্বাচনের আয়োজন করা হয়েছে ১ নম্বর ব্লকের কাঞ্চননগর হাই স্কুলে। সকাল থেকেই এই ভোটগ্রহণ ঘিরে চাপা উত্তেজনা ছিলই। তৃণমূল বনাম বিজেপির লড়াইয়ে চারিদিকে দলীয় পতাকায় ছেয়ে দেওয়া হয়। তারই মাঝে ভোটগ্রহণ পর্ব বেশ কিছুক্ষণ চলার পরেই উত্তেজনা তৈরি হয়।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিজেপি ও তৃণমূলের লোকেরা বুথের আশেপাশে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়তে থাকে। এরপরেই আচমকাই শুরু হয়ে যায় ব্যাপক বোমাবাজি। মুহুর্মুহু বোমা ছোঁড়ার শব্দে কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা। খবর পেয়ে বিশাল পুলিশ বাহিনী এলাকায় ছুটে যায়। বিজেপির দাবি, পুলিশের সামনেই দুষ্কৃতীরা নির্দ্বিধায় বোমাবাজি চালিয়েছে। ঘটনাস্থলে পৌঁছন তমলুকের প্রাক্তন সাংসদ তথা বিজেপির নেতা দিব্যেন্দু অধিকারী। কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরাটোপে তিনি বোমাবাজির এলাকায় গিয়ে দলীয় কর্মীদের পাশে দাঁড়ান। পুলিশও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মাঠে নামে।
দীর্ঘ চেষ্টার পর বোমাবাজি কিছুটা থামলেও উত্তেজনার পরিস্থিতি থাকায় বহু ভোটাররা আর বুথ মুখো হতে চাননি। তবে নন্দীগ্রাম থানা সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঘটনাস্থলে জেলা পুলিশের কর্তাব্যক্তিরাও হাজির রয়েছেন। সেই সঙ্গে বিপুল পরিমানে পুলিশ এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন - শপিং মলের ভিতরে কালো কাচে ঘেরা দোকান, তার মধ্যেই চলছিল সেই সব কাণ্ড, ধরল পুলিশ
বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক মেঘনাদ পাল জানান, ‘গতকাল থেকে বুথ এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। ১০০ মিটারের বাইরে ক্যাম্প করার কথা বলা হয়েছে। অথচ সেখানে রীতিমতো প্রহসন করছে তৃণমূল। পুলিশের সামনেই ব্যাপক বোমাবাজি করল ওরা। আমাদের এক নেতার মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনার জেরে আমি নিজেও আমার ভোটটা দিতে পারিনি।’ মেঘনাদের দাবি, ‘নন্দীগ্রামের ভোটারদের ওপর তৃণমূলের আস্থা নেই বলেই এমন বোমাবাজি করছে।’
তবে এই ঘটনায় তৃণমূলের তরফে এখনও কোনও বক্তব্য জানা যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দা দেবপ্রসাদ মাইতি জানান, ‘আমরা দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম। সেই সময় আচমকা লক্ষ্য করে বোমা ছোঁড়া হয়। অল্পের জন্য আমরা প্রাণে বেঁচে গিয়েছি। কিছুটা দূরেই স্কুলের মধ্যে ভোট গ্রহণ চলছে। সেই নিয়েই হয়তো এত বোমাবাজি চলছে। এই ঘটনায় আমরা এলাকাবাসীরা রীতিমতো আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি’।