এবার শান্তিনিকেতনের বাড়ি বিতর্কে মুখ খুললেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। তিনি জানালেন, প্রায় ৮০ বছর আগে বাড়ি তৈরি হলেও কোনওদিন অনিয়মের কথা জানানো হয়নি। এবারও তাঁকে চিঠি দিয়ে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে কিছু জানানো হয়নি। শুধুমাত্র সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনে আইনি পথেই ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানিয়েছেন অমর্ত্যবাবু।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের তরফে দাবি করা হয়, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের শান্তিনিকেতনের 'প্রতীচী'-র মধ্যে বিশ্বভারতীর নিজস্ব জমি ঢুকে গিয়েছে। রজতকান্ত রায় উপাচার্যের দায়িত্বভার সামলানোর সময় মৌখিকভাবে বিষয়টি অমর্ত্যবাবুকে একাধিকবার জানিয়েছিলেন। কিন্তু অমর্ত্যবাবু তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি বলে বিশ্বভারতীর তরফে দাবি করা হয়। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি প্রশ্নের জবাবে বৃহস্পতিবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছিলেন, বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খোলার জন্য অমর্ত্যবাবুর মতো মনীষীকে আক্রমণ করা হচ্ছে। পরে শুক্রবার অমর্ত্যবাবুকে চিঠি লিখে পাশে থাকার আশ্বাস দেন মমতা। একইসঙ্গে তাঁকে ‘বন্ধু এবং বোন’ হিসেবেও বিবেচনা করার অনুরোধ করেন।
সেই বিতর্কের মধ্যে অমর্ত্যবাবু জানিয়েছেন, দীর্ঘমেয়াদি লিজে ‘প্রতীচী’-র জমি নেওয়া হয়েছিল। তার মেয়াদ এখনও আছে। এবিপি আনন্দে সাক্ষাৎকারে অমর্ত্যবাবু জানান, প্রায় ৮০ বছর আগে বাড়ি তৈরি করা হলেও এতদিন কোনও অভিযোগ করা হয়নি। কিন্তু আচমকা সে বিষয়ে মুখ খোলা হচ্ছে। তিনি বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে সহানুভূতি জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন, তাতে দুঃখ করার কিছু নেই। কিন্তু হঠাৎ বিশ্বভারতী থেকে এরকমভাবে মিথ্যে কথা বলা শুরু করল কেন..সেটার বোধহয় রাজনৈতিক কারণ থাকতে পারে। আর সেই কারণটা কী হতে পারে, সে নিয়েও মুখ্যমন্ত্রী দু'এক কথা বলেছেন। আমায় চিঠিতেও বলেছেন। বক্তব্য হিসেবে সাধারণ আলোচনায় সে বিষয়ে বলেছেন।'
এমনিতেই দীর্ঘদিন ধরে বিজেপির মতাদর্শের বিরুদ্ধে খুলেছেন অমর্ত্যবাবু। একাধিক বিষয়ে সমালোচনা করেছেন। একাংশের দাবি, সেই কারণেই জমি নিয়ে অমর্ত্যবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে। যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের নিজেরও মত, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে মুখ খোলার জন্যও এরকম অভিযোগ করা হতে পারে। বলেন, ‘উপাচার্যের অফিস থেকে যে যুদ্ধ চালানো হচ্ছে, তার মধ্যে একটা রাজনৈতিক কারণ থাকতে পারে। কেন না যে রাজনৈতিক দলের প্রতি বিদ্যুৎ এবং তাঁরা কৃতজ্ঞ, তাদের প্রতি অনেক সময় সমালোচনার কারণ দেখেছি। কারণ আমার জন্ম বাংলায় - শান্তিনিকেতনেই। বড় হয়েছি শান্তিনিকেতন এবং ঢাকায়। আমাদের যে চিন্তাভাবনা, তার মধ্যে আছেন রবীন্দ্রনাথ (ঠাকুর), নজরুল (ইসলাম) এসে পড়েন। সেইসব বাদ দিয়ে শুধু একদিকে সাম্প্রদায়িকতা করাটা আমার পক্ষে একেবারে শোচনীয় বলে। এটার যোগ থাকতে বলে আমি আগে ভাবিনি। মুখ্যমন্ত্রীর চিঠির পর মনে হল, নিশ্চিত যোগ আছে।’