নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের শান্তিনিকেতনের বাড়ি ‘প্রতীচী’র গেটে উচ্ছেদের নোটিশ ঝুলিয়ে দিয়েছিল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। চলতি মাসেই সেটা করা হয়েছিল। যা নিয়ে শোরগোল পড়ে যায়। এবার সেই নোটিশের আইনি যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরাসরি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিলেন অমর্ত্য সেন। এই নোটিশে উল্লেখ করা হয়, ১৯ এপ্রিল এই জমি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। আগামিকাল বুধবার নোটিশ অনুযায়ী হেস্তনেস্ত হওয়ার কথা। তবে তার আগে ১৭ এপ্রিলই বিশ্বভারতীকে চিঠি দিলেন অমর্ত্য সেন।
ঠিক কী লিখেছেন চিঠিতে? বিশ্বভারতীকে অমর্ত্য সেন চিঠিতে লিখেছেন, ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত কেমন করে কেউ এই জমি দাবি করতে পারেন? ‘প্রতীচী’–র জমির আইনশৃঙ্খলা এবং শান্তিরক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক। সেটাই অমর্ত্য সেন চিঠি দিয়ে মনে করিয়ে দিলেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে। অমর্ত্য সেন সেখানে আরও জানান, জুন মাসেই শান্তিনিকেতনে ফিরছেন তিনি। তবে বিশ্বভারতীর সঙ্গে তাঁর জমি বিবাদ এই চিঠিতে যে মিটছে না সেটা স্পষ্ট। কারণ বিশ্বভারতীর হাতে এখনও এই জমি আসেনি। আর অমর্ত্যের বক্তব্য, জমির লিজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাতে কোনও দাবি করতে পারে না বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
আর কী জানা যাচ্ছে? বিশ্বভারতী এই উচ্ছেদ করে দখল করার নোটিশ দেয় ১৪ এপ্রিল। বিশ্বভারতীর শুনানি ছিল ১৩ এপ্রিল। সেখানে উপস্থিত থাকতে পারেননি নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। কারণ তিনি বিদেশে ছিলেন। তারপরই সেঁটে যায় নোটিশ। এই জমি দখল করে রেখেছেন অমর্ত্য সেন বলে বিশ্বভারতীর অভিযোগ। আর পাল্টা অমর্ত্য সেনের দাবি, এই জমি তাঁর বাবার। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নথি হাতে দিয়ে অমর্ত্য সেনের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। তাতে ক্ষুব্ধ হন বিশ্বভারতী উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। আর মুখ্যমন্ত্রী–অর্থনীতিবিদকে আক্রমণ করেন। ১.৩৮ একর জমি অমর্ত্য সেনের নামে মিউটেশন করা হয়েছে বলে প্রশাসন জানিয়ে দিয়েছে।
কার ঠিক কী বক্তব্য? মিউটেশন করার কথা জানানো হলেও বিশ্বভারতী তাঁদের নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড়। অমর্ত্য সেনের আইনজীবীকে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের পক্ষ থেকে ইমেলে বলা হয়, ১৯৭১ সালের দখলদার উচ্ছেদ আইন অনুযায়ী আগামী ১৯ এপ্রিল কড়া সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অর্থাৎ ওই উচ্ছেদ করে দখল নেওয়া হবে জমি। আর অমর্ত্য সেন চিঠিতে লেখেন, ‘আমার শান্তিনিকেতনের পৈতৃক বাড়িতে বিশ্বভারতীর কিছু জমি আছে এমন একটা বিবৃতি দেখেছি। যে বাড়ি ও জমি ১৯৪৩ সাল থেকে আমরা নিয়মিত ব্যবহার করছি। এই জমির ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কেউ জমি দাবি করতে পারে না।’