ভয়াবহ বৃষ্টি ও ধসে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ এখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে। যদিও এখনও বহু মানুষ আশ্রয়হীন অবস্থায় রয়েছেন, প্রাণ হারিয়েছেন অনেকেই। এই পরিস্থিতির মধ্যেই বিজেপি সাংসদ ও বিধায়ককে হামলার ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনীতি। নাগরাকাটায় বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু ও বিধায়ক শঙ্কর ঘোষের উপর হামলার পর থেকেই উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি ঘিরে শুরু হয়েছে প্রবল চাপানউতোর। ঠিক সেই সময়েই আগামী ৮ অক্টোবর উত্তরবঙ্গ সফরে আসতে পারেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এনিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনীতিতে।
আরও পড়ুন: 'কোনও অপ্রীতিকর...,' উত্তরবঙ্গে BJP নেতাদের উপর হামলা,বিশেষ বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর
সূত্রের খবর, বিপর্যস্ত অঞ্চলগুলি সরেজমিনে দেখতে এবং দলের রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করতেই অমিত শাহের এই সফর। যদিও বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতারা এই বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। দলের এক অংশ বলছে, এখনই কিছু বলা ঠিক হবে না, কারণ পরিস্থিতি খুবই সংবেদনশীল। উল্লেখ্য, সোমবারই নাগরাকাটা পরিদর্শনে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন খগেন মুর্মু ও শঙ্কর ঘোষ। তাঁদের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। খগেন মুর্মু গুরুতর জখম হয়ে বর্তমানে শিলিগুড়ির এক বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে দিল্লির এইমসে নিয়ে যাওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। এই ঘটনার পরই সরব হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উত্তরবঙ্গের ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি তিনি বিজেপি সাংসদদের উপর হামলার তীব্র নিন্দা করেন। একইসঙ্গে তিনি তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ করে বলেন, এমন সময়ে রাজনীতি নয়, মানুষের পাশে দাঁড়ানোই উচিত। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং-ও এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল পৌঁছে গিয়েছেন বিপর্যস্ত এলাকায়। তিনি পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ও বিজেপি রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যও সোমবার সকালে উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি পরিদর্শন করেছেন। এখন উত্তরবঙ্গ কার্যত রাজনৈতিক কেন্দ্রবিন্দুতে। বিজেপি রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যও জানিয়েছেন, দুর্যোগের এই সময়ে রাজনীতি নয়, মানুষের পাশে থাকা এখনই সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।
তবুও নাগরাকাটার হামলা ঘিরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত বাড়ছেই। একদিকে বিজেপি বলছে, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই আক্রমণ চালিয়েছে, অন্যদিকে তৃণমূলের যুক্তি, মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। এই রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যেই যদি সত্যিই অমিত শাহ উত্তরবঙ্গ সফরে আসেন, তবে তা নিঃসন্দেহে রাজ্য রাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তবে এখন পর্যন্ত অমিত শাহের সফরসূচি নিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়নি।