গরুপাচারকাণ্ডে গ্রেফতার বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রতকে ১০ দিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দিল আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালত। বৃহস্পতিবার বিকেলে এই রায় শোনান বিশেষ আদালতের বিচারক। এদিন আদালতে অনুব্রতর জামিনের আবেদনই করেননি তাঁরা আইনজীবী। উলটে সিবিআই তাঁকে ১৪ দিনের জন্য হেফাজতে চায়। সূত্রের খবর, আজ রাতেই অনুব্রতকে কলকাতায় নিয়ে আসতে পারে সিবিআই।
এদিন বিকেল ৫টায় অনুব্রতকে আদালতে পেশ করে সিবিআই। অনুব্রতকে আদালতে নিয়ে পৌঁছতেই উত্তেজনা ছড়ায়। আদালত চত্বরে ‘চোর’, ‘গরুচোর’ বলে চিৎকার করে ওঠে উপস্থিত জনতা। অনেকে চটি হাতে তেড়ে যায়। বিক্ষোভ হয় আদালত ভবনের ভিতরেও। এর পর কোনওক্রমে অনুব্রতকে কোর্ট লকআপে ঢোকায় সিবিআই।
আদালতেও অনুব্রতকে ঘিরে ‘চোর চোর’ স্লোগান, চটি হাতে তেড়ে এলেন অনেকে
শুনানি শুরু আদালতে জামিনের কোনও আবেদন করেননি অনুব্রতর আইনজীবী। তিনি জানান, অনুব্রত অসুস্থ। তা সত্বেও তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তখন অনুব্রতর কাছে তাঁর অসুস্থতার ব্যাপারে জানতে চান বিচারক। বিচারককে অনুব্রত বলেন, তিনি ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। তাঁর কিডনির সমস্যা রয়েছে। অর্শের সমস্যায় ভুগছেন তিনি। এরই মধ্যে আদালত ভবনে একটি অক্সিজেন কন্সেট্রেটর নিয়ে ঢুকতে দেখা যায় সিবিআইয়ের এক আধিকারিককে।
পালটা সওয়ালে সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে তাঁদের কাছে একাধিক প্রমাণ রয়েছে। তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখে জানা গিয়েছে তাতে মোটা টাকার লেনদেন হয়েছে। অনুব্রতকে জেরা করলে অনেক নতুন তথ্য পাওয়া যেতে পারে। তাই তাঁকে ১৪ দিনের জন্য হেফাজতে প্রয়োজন। দুপক্ষের বক্তব্য শুনে রায় পরে জানানো হবে বলে ঘোষণা করেন বিচারক। সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিট নাগাদ আদালতের তরফে জানানো হয়, অনুব্রত মণ্ডলকে ১০ দিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। আগামী ২০ অগাস্ট ফের তাঁকে আদালতে পেশ করতে হবে।
রায় ঘোষণা হতেই সিবিআই সূত্রে জানা যায়, আজ রাতেই অনুব্রতকে কলকাতার নিজাম প্যালেসে নিয়ে যেতে পারেন আধিকারিকরা। কাল তাঁর শারীরিক পরীক্ষা করিয়ে শুরু হবে জিজ্ঞাসাবাদ। এমনকী তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় সঙ্গে একজন চিকিৎসককে রাখার কথাও ভাবছেন সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা। তবে এব্যাপারে আদালতের তরফে কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি।
সিবিআইয়ের দাবি, ইলামবাজার গরুর হাটের মাধ্যমে বাংলাদেশে গরুপাচার হত। সেই হাতের মালিক আবদুল লতিফ ও গরু ব্যবসায়ী এনামুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল অনুব্রত মণ্ডলের। দেহরক্ষী সায়গল হোসেনের ফোন থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন অনুব্রত। সেকথা স্বীকার করেছেন সায়গল। যদিও যে সিম দিয়ে যোগাযোগ করা হত সেটি সায়গলের এক আত্মীয়ের নামে নথিভুক্ত। এক বছরে ৩০০ বার পর্যন্ত অনুব্রতর সঙ্গে এনামুলের যোগাযোগ হয়েছে বলে সিবিআইয়ের দাবি।