বাংলার চিকিৎসা ব্যবস্থা যে সেরার জায়গা দখল করেছে তার একাধিক নজির আছে। শিশুর জটিল অস্ত্রোপচার থেকে শুরু করে মৃ্ত্যু হতে পারত এমন রোগীকে বাঁচিয়ে তোলা বারবার করে দেখিয়েছে বাংলার চিকিৎসকরা। এবার আসানসোল জেলা হাসপাতালের কর্মকাণ্ডের জেরে বাংলার সুনাম ছড়িয়ে পড়ল। নতুন পালক যোগ হলও বলা যায়। বাংলায় এই প্রথম আসানসোল হাসপাতালে হল ‘স্তন পুনর্গঠন’ বা ‘ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট।’ এই গোটা বিষয়টাই করেছেন আসানসোল হাসপাতালের শল্য চিকিৎসকরা। আর সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের প্রখ্যাত শল্য চিকিৎসক ডাঃ দীপ্তেন্দ্র সরকার। যিনি এসএসকেএম হাসপাতালের সঙ্গে জড়িত।
‘ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট’ যে বাংলায় হতে পারে তা অনেকেই কল্পনা করতে পারেননি। আজ তা শুনে অনেকেই অবাক। সরকারি হাসপাতাল বা জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা ভাল নয় এমন নজিরই এতদিন ছিল। ২০১১ সালের পর থেকে পরিস্থিতি বদল হতে শুরু করে। তারই ফসল এই ‘ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট’। এই বিষয়ে ডাঃ দীপ্তেন্দ্র সরকার বলেন, ‘এসএসকেএম হাসপাতালে এই ধরনের অস্ত্রোপচার আমরা আগেও করেছি। কিন্তু কোনও জেলা হাসপাতালে এই ধরনের অস্ত্রোপচার রাজ্য বা দেশের মধ্যে প্রথম হল। আসানসোল পৌরনিগমের সহায়তায় এবং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের উদ্যোগে সম্পূর্ণ কাজটাই করেছেন আসানসোল হাসপাতালের চিকিৎসকরা। আমরা সহযোগিতা করেছি মাত্র।’
আরও পড়ুন: পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে ক্লিনচিট কলকাতা হাইকোর্টের, বিচারক নিয়োগের জট কাটল
আসানসোল হাসপাতাল সূত্রে খবর, স্তনে টিউমার হয়েছিল সালানপুর ব্লকের এক মহিলার। আর স্তনে টিউমার নিয়ে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ওই মহিলা আসেন চিকিৎসা করাতে। সেই চিকিৎসা করতে গিয়ে অস্ত্রোপচার হয় তাঁর। এরপর তাঁর বায়োপসি রিপোর্ট আসে। সেখানে ওই মহিলার স্তনে ক্যানসারের উপস্থিতি মেলে। এতে বেশ চাপে পড়ে যান ওই মহিলা এবং পরিবারের সদস্যরা। এই ধরণের রোগের ক্ষেত্রে ঝুঁকি এড়াতে চান চিকিৎসকরা। তাই অস্ত্রোপচার করে আক্রান্ত স্তন শরীর থেকে বাদ দেন চিকিৎসকরা। তবে এক্ষেত্রে ওই মহিলা চিকিৎসকদের জানান, তিনি স্তন বাদ দিতে চান না। স্তনের পুনর্গঠন চান।
এই কথা শোনার পর চাপে পড়ে যান চিকিৎসকরা। কারণ ‘স্তন পুনর্গঠন’ বা ‘ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট’ খুব জটিল একটি বিষয়। তাও আবার জেলা হাসপাতালে করা আরও কঠিন কাজ। কিন্তু চিকিৎসকরা সেটা কঠিন মনে করলেও অসম্ভব মনে করেননি। তাই গোটা চিকিৎসা যথেষ্ট ব্যয়সাধ্য এবং কঠিন হলেও তাঁরা ঝাঁপিয়ে পড়েন। এই বিষয়ে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে আসানসোল পুরসভা কর্তৃপক্ষ। যোগাযোগ করা হয় এসএসকেএম হাসপাতালের প্রখ্যাত শল্য চিকিৎসক ডাঃ দীপ্তেন্দ্র সরকারের সঙ্গে। তিনি পরামর্শ এবং সহায়তা করতে এগিয়ে আসেন। আর আজ, মঙ্গলবার সফলভাবেই হল অস্ত্রোপচার। রোগী এখন সুস্থ আছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর।