আবারও ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটল এ রাজ্য়ে। এবারের ঘটনাস্থল বীরভূমের বোলপুর। প্রাথমিকভাবে যত দূর জানা গিয়েছে, বিধ্বংসী এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে বোলপুরের একটি বহুতলে। ঘটনায় এখনও পর্যন্ত অন্তত দু'জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। শেষ পাওয়া খবর অনুসারে, এই ঘটনায় আহতের সংখ্যা অন্তত পাঁচ। আহতদের মধ্যে দু'টি শিশুও রয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে দমকলের একাধিক ইঞ্জিন। দমকলকর্মীরা আগুন বাগে আনার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাত ৮টা ৩০ মিনিট নাগাদ প্রথম ওই বহুতল থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখেন পথচলতি লোকজন ও এলাকার বাসিন্দারা। যে বহুতল থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়, সেটির নাম - সাঁঝবাতি। বোলপুরের অত্যন্ত জনবহুল বাঁধগোড়া এলাকায় রয়েছে এই আবাসনটি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান থেকে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, ধোঁয়া দেখতে পাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই আগুনের লেলিহান শিখা বহুতলটিকে গ্রাস করে নেয়। তাতে ঝলসে প্রাণ যায় অন্তত দু'জনের। দু'জনই বয়সে প্রবীণ। তাঁদের একজন হলেন ৬৮ বছরেরে স্বপন নন্দী এবং অন্যজনের নাম অঞ্জু নন্দী। তাঁর বয়স ৬২ বছর। এছাড়াও, এখনও পর্যন্ত এই আগুনে পাঁচজনের আহত হওয়ার খবর সামনে এসেছে।
এই ঘটনায় দমকলের বিরুদ্ধেও কিছু অভিযোগ উঠেছে। জানা গিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকলের তিনটি ইঞ্জিন। কিন্তু, তাদের কাছে হাইড্রলিক ল্যাডার ছিল না! ফলত, বাঁশের মই লাগিয়ে বহুতল থেকে আক্রান্তদের উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়। কার্যত প্রাণ হাতে করে সেই কাজ করেন দমকলকর্মীরা। আগুনের ভয়াবহতা দেখে পরে আরও দু'টি ইঞ্জিন সেখান যায়।
প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, শর্ট সার্কিটের জেরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র বা এয়ার কন্ডিশনার (এসি) ফেটেই এই ভয়াবহ অঘটন ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান থেকে আরও জানা গিয়েছে, আগুন লাগার পর বহুতলের নীচে দাঁড়িয়ে থাকা একটি স্কুটারেও আগুন লেগে যায়। ফলত, ভিতর ও বাইরে - দুই দিক দিয়েই দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে থাকে এবং দ্রুত তা আরও ছড়িয়ে পড়ে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান বীরভূম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুপার (বোলপুর) রাণা মুখোপাধ্যায় ও বোলপুরে এসডিপিও। তাঁদের নেতৃত্বে পুলিশের বিরাট বাহিনীকেও ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। যেকোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ঘটনাস্থল ও তার আশপাশে কমব্যাট ফোর্স মোতায়েন করা হয়।
অন্যদিকে, দমকলকর্মীদের আগুন নেভানোর কাজে নেতৃত্ব দেন বোলপুর দমকল বিভাগের ওসি সৌরভ মণ্ডল। এই ঘটনার জেরে দীর্ঘক্ষণ শ্রীনিকেতন রোড কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
পরবর্তীতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমে উল্লেখ করা হয়, এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মোট ৬০ জনকে উদ্ধার করেছেন দমকলকর্মীরা। তাঁদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গিয়েছে। আগুন লাগানোর কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে, শর্টসার্কিটের যে একটা সম্ভাবনা রয়েছে, তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপারও জানিয়েছেন। যে ফ্ল্যাটে প্রথম আগুন লাগে বলে দাবি করা হচ্ছে, সেটিকে আপাতত সিল করে রাখা হবে বলে জানিয়েছেন ওই পুলিশকর্তা।