ঘূর্ণিঝড় মানেই তাণ্ডবে সবকিছু তছনছ হওয়া। ঘূর্ণিঝড় মানেই মানুষের মৃত্যু, গাছ ভেঙে পড়া, নদী বাঁধে ভাঙন প্রভৃতি। তবে ঘূর্ণিঝড় যে শুধু তছনছই করে তা নয়, অনেক সময় নতুনভাবে সবকিছু তৈরিতেও সাহায্য করে। আর এরকমই ঘূর্ণিঝড় কয়েক বছর ধরে নিখোঁজ থাকা এক ব্যক্তিকে তাঁর পরিবারের সঙ্গে মিলিয়ে দিল। বিষয়টি অবাক লাগলেও এটাই ঘটেছে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের জেরে মহম্মদ মিলন নামে এক বাংলাদেশি নাগরিককে ফিরে পেল তাঁর পরিবার। আর যেভাবে পরিবারটি ওই ব্যক্তিকে ফিরে পেল তা কার্যত হার মানাবে সিনেমার দৃশ্যকে।
আরও পড়ুন: রেমালের তাণ্ডবে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে উদ্বিগ্ন মোদী-শাহ, রাজ্যগুলিকে সাহায্যের আশ্বাস
জানা যাচ্ছে, ওই ব্যক্তি বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার নাঙ্গোলকোটের দোলখা গ্রামের বাসিন্দা। তবে তিনি কোনওভাবে চলে এসেছিলেন এপার বাংলার দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার নামখানায়। রেমালের পূর্বাভাস পেতেই সেখানে উপকূলীয় অঞ্চল থেকে মানুষজনকে নিরাপদে একাধিক ত্রাণ শিবিরে সরানো হচ্ছিল। সেই সময় অনুপ শাসমল একজন বিপর্যয় মোকাবেলা কর্মী নামখানার একটি বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় ওই ব্যক্তিকে দেখতে পান। প্রতিকূল আবহাওয়া সত্ত্বেও তিনি বেড়িবাঁধের পাশে বসেছিলেন।তখন তিনি নাম বা ঠিকানা কিছুই বলতে পারেননি অনুপকে। তাতে তাঁর বুঝতে দেরি হয়নি যে ওই ব্যক্তি মানসিক ভারসাম্যহীন। তবে তাঁর কথাবার্তা শুনে অনুপ বুঝতে পারেন তিনি বাংলাদেশের বাসিন্দা এবং মাছ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
এরপর অনুপ কোনওভাবে মিলনকে ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যান। সেখানে বাসিন্দাদের নাম এবং ঠিকানা একটি রেজিস্টারে লেখা বাধ্যতামূলক হলেও মিলনের ক্ষেত্রে তা ব্যতিক্রম করতে হয়েছিল। তাণ্ডব শেষ হয়ে যাওয়ার পর তাঁকে পাশের সরকারি আশ্রয়স্থলে রাখা হয়েছিল। এরপর অনুপ ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাব নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেখানে ওই ব্যক্তির সম্পর্কে জানান তিনি। সাধারণত নিখোঁজদের তাঁদের পরিবারের সঙ্গে মিলিয়ে দিয়ে থাকে এই সংস্থাটি। এরপরেই সংস্থার কর্মীরা সেখানে গিয়ে ওই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। তবে তিনি নিজের পরিচয় সেভাবে কিছুই জানতে পারেননি। তা সত্ত্বেও তাঁর পরিচয় খুঁজে বের করতে খুব বেশি দেরি হয়নি বলে জানান ওই সংস্থার সম্পাদক অম্বরিশ নাগ বিশ্বাস।
তিনি জানান, নাঙ্গোলকোট থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায় ওই ব্যক্তির নাম হল মহম্মদ মিলন। তিনি ওই গ্রামের রুস্তম আলির ছেলে। প্রায় চার বছর আগে তিনি নিখোঁজ হয়েছিলেন। তাঁর পরিবারে রয়েছে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে। বর্তমানে ছেলে ও মেয়ের তাদের বয়স যথাক্রমে ৯ ও ১৬ বছর। এরপরেই ওই পরিবারের সঙ্গে ভিডিয়ো কলে মিলনের সঙ্গে কথা বলায় সংস্থাটি। তাতে পরিবারের সদস্যদের খুশির শেষ ছিল না। কান্নায় ভেঙে পড়ে গোটা পরিবার।
কীভাবে নিখোঁজ হয়েছিলেন?
জানা যাচ্ছে, মিলন একজন মাছ ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন মাছ কিনতে। প্রচুর টাকা নিয়ে তিনি বেরিয়েছিলেন। তারপর আর তিনি ঘরে ফেরেননি। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর দেহও পাওয়া যায়নি। তখন পরিবারের সদস্যরা ভেবেছিলেন তাঁকে হয়ত দুষ্কৃতীরা খুন করে টাকা লুট করে পালিয়েছে। যদিও কীভাবে তিনি নামখানায় পৌঁছলেন তা রহস্যই থেকে গিয়েছে।
যখন পরিবারের সদস্যরা মিলনকে ভিডিয়ো কলে দেখেন তখন তাঁর স্ত্রী এবং খুড়তুতো ভাই, ছেলে, মেয়ে কেউই নিজেদের আবেগকে আর সামলে রাখতে পারেননি। সকলেই কেঁদে ফেলেন। অম্বরিশ বাবুর কথায়, যদি রেমাল না থাকত তাহলে মিলনবাবু হয়ত এখনও রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন। তাঁর পরিবার আর তাঁকে ফিরে পেত না। জানা যাচ্ছে, এই মুহূর্তে মিলনকে দেশে পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় সব রকমের পদক্ষেপ করা হচ্ছে।