প্রথমে গৃহস্থের গোয়াল থেকে গরু চুরি, আর তারপর সময় সুযোগ বুঝে মোটা টাকায় সেই গরু পাচার! এভাবেই চলছিল। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, এই গরু চুরি ও পাচার চক্রের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জেলার দুষ্কৃতীদের যোগসাজশ রয়েছে বা তা থাকতে পারে।
এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় ন'জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে বাঁকুড়া জেলা পুলিশ। ধৃতদের জেরা করে বেরিয়ে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। এখনও অধরা রয়েছে চক্রের মাথারা।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, সম্প্রতি বাঁকুড়া জেলার একাধিক জায়গা থেকে একের পর এক গরু চুরির অভিযোগ আসতে থাকে। জেলার জয়পুর ও কোতুলপুর থানা এলাকার অন্তত চার থেকে পাঁচটি জায়গায় গরু চুরির ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ ওঠে। এর কিছু সময় পর তালডাংরা থানা এলাকায় ফের গরু চুরির অভিযোগ দায়ের করা হয়।
বারবার এমন ঘটনায় নড়েচড়ে বসে বাঁকুড়া জেলা পুলিশ। স্থির হয়, আলাদা করে একটি তদন্তকারী দল গঠন করে এই ঘটনাগুলি খতিয়ে দেখা হবে। সেই মতো পুলিশের পাঁচজন আধিকারিককে নিয়ে একটি তদন্তকারী দল গঠন করা হয়।
তদন্তের অন্য়ান্য প্রক্রিয়া চালানোর পাশাপাশি এই দলের সদস্যরা নাকাচেকিং ও তল্লাশির উপর বাড়তি গুরুত্ব দেয়। পুলিশের ইনফর্মারদের নেটওয়ার্কও সক্রিয় করা হয়। তার ফলে গোপন সূত্রে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পুলিশের হাতে আসে।
সেই গোপন তথ্যের উপর ভিত্তি করেন সম্প্রতি জয়পুর থানা এলাকায় নাকা চেকিং চালান তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকরা। সেই নাকাচেকিং চলার সময়ে গরু পাচারকারীদের একটি দলকে ধরে ফেলে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে বেশ কয়েকটি গরু উদ্ধার করা হয়। যেগুলিকে পাচার করার উদ্দেশ্য়েই নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। আর, উদ্ধার হয় আগ্নেয়াস্ত্র।
এরপর এই অভিযুক্তদের জেরা করে এই পাচারচক্র সম্পর্কে আরও অনেক তথ্য আসে বাঁকুড়া পুলিশের হাতে। সেই তথ্যের উপর নির্ভর করে শনিবার রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলা থানা এলাকায় স্থানীয় থানার সহযোগিতায় বিশেষ অভিযান চালানো হয়। তাতে ফের সাফল্য আসে।
পুলিশের জালে ধরা পড়ে এই চক্রের আরও তিন সক্রিয় সদস্য। ধৃতরা হল - ইমরান লস্কর, শেখ সিরাজ ও শেখ বিকি। রবিবার এই তিন অভিযুক্তকেই বিষ্ণুপুর মহকুমা আদালতে পেশ করে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানায় পুলিশ।
পুলিশের অনুমান, এই চক্রের যে বা যারা মাথা, সে বা তারা আসলে দক্ষিণ ২৪ পরগনারই বাসিন্দা। ধৃতদের জেরা করে এবার তাদের শনাক্ত করার এবং নাগাল পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।