বাংলাদেশে এখন অশান্ত পরিবেশ অব্যাহত। এই আবহে ওপার বাংলা থেকে এপার বাংলায় চলে আসছেন নাগরিকরা। আর তাঁদের গ্রেফতার করছে রাজ্য পুলিশ। এবার ওপার বাংলার গাজিপুর জেলার বাসিন্দা এপারে এসে ভুয়ো পরিচয় দিয়ে ছদ্মবেশে বসবাস করতে শুরু করলেন। বাংলাদেশের নুরুল ইসলাম বাংলার মাটিতে ঢুকে হয়ে গেলেন নারায়ণ অধিকারী। বাবার নাম গিয়াস মিঞা বদলে দিয়ে করা হয় নগেন অধিকারী। আর এই পরিচয় বাতলেই বসবাস করতে শুরু করেছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতে। সেখানের দক্ষিণ কাজিপাড়ার বাসিন্দা শেখ রফিকুল ইসলামের বাড়িতে নিজেকে যুক্ত করে ফেলেছিলেন নুরুল। আর এই রফিকুলের আসল বাড়িও বাংলাদেশের মাদারিহাটে।
একে অন্যকে আগে থেকেই চিনতেন। সেটারই সুযোগ নিয়ে কাঁটাতার পেরিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন এপার বাংলায়। সম্প্রতি এই দু’জনের সন্দেহজনক গতিবিধির খবর পেয়ে যায় পুলিশ। তারপরই ওত পেতে দু’জনকেই বামনগাছি চৌমাথা সংলগ্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করল দত্তপুকুর থানার পুলিশ। বারাসত থেকে আগেও বাংলাদেশি নাগরিকদের ভারতের পরিচয়পত্র তৈরি করে দেওয়ার অভিযোগে সমীর দাস–সহ মোট চারজনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। আবার দুই বাংলাদেশি গ্রেফতার হতেই আলোড়ন ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত নুরুল গত সাড়ে তিন বছর ধরে বারাসতের দক্ষিণ কাজিপাড়ার রফিকুলের বাড়িতে থাকছিলেন।
আরও পড়ুন: কচুবেড়িয়ার পুলিশ ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, গঙ্গাসাগর মেলা চলাকালীন তাল কাটল
এখানে থাকাকালীনই রফিকুল কৌশলে নুরুলকে নারায়ণ নামে জাল আধার কার্ড, প্যান কার্ড এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স বানিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। সেগুলিও আজ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রফিকুল এপার বাংলায় গত ২০ বছর ধরে বসবাস করছিলেন। প্রথমে রফিকুল দত্তপুকুর এলাকায় থাকতে শুরু করে। পরে দক্ষিণ কাজিপাড়ায় বাড়ি তৈরি করে চলে যান। এদেশের মহিলাকে বিয়ে করে একেবারে এখানেই থাকতে শুরু করেন। পেশায় অটোচালক হলেও দু’জনের জীবনযাত্রা সচ্ছলই ছিল। লক্ষাধিক টাকার আইফোন ছিল তাঁদের কাছে। তাঁদের চালচলন দেখে এলাকার মানুষজনদের সন্দেহ হয়।
সেটাই এবার ফাঁস হয়ে গেল। বাংলাদেশের উত্তাল পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে এপার বাংলা নানা জায়গায় অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকতে শুরু করেছে। জঙ্গিরাও ঢুকে পড়েছিল। তাদের ধরে ফেলা হয়। এবার ধরা পড়তে শুরু করেছে একের পর এক বাংলাদেশের নাগরিক। স্থানীয় বাসিন্দাদের থেকে খবর পেয়ে রফিকুল এবং নুরুলের গতিবিধির উপরও নজর রাখতে শুরু করে পুলিশ। অবশেষে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, বাংলাদেশি দালালের মাধ্যমে নুরুল পদ্মাপার থেকে বাংলার ক্লায়েন্ট জোগাড় করতেন। তারপর মোটা টাকার বিনিময়ে রফিকুলের মাধ্যমে বাংলাদেশি নাগরিকদের ভারতের ভুয়ো পরিচয়পত্র বানিয়ে দিতেন। ধৃত এই দু’জনের সঙ্গে বারাসত থানার পুলিশের হাতে গ্রেফতার চারজনের কোনও যোগ আছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।