এখনও ১০০ দিন বাকি দুর্গাপুজো আসতে। আর তার মধ্যেই পুজো কমিটি কার দখলে থাকবে তা নিয়ে শুরু হয়ে গেল বচসা। এই বচসা পৌঁছয় মারামারিতে। আর তার জেরে মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটল ব্যারাকপুরে। মৃত ওই ব্যক্তি একজন তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী। মৃত তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীর নাম পার্থ চৌধুরী (৪৩)। ওই তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীর মৃত্যুর নেপথ্যে স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের কাউন্সিলরের দলবল আছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিন পুজো কমিটির বৈঠকের সময় বচসা হয়। তখন ঘরের দরজা বন্ধ করে পার্থবাবুকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনা নিয়ে রবিবার রাতে ব্যাপক আলোড়ন ছড়িয়ে পড়ে ব্যারাকপুর পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডে। যদিও কাউন্সিলর সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এই ঘটনাকেও অনেকে গণপিটুনি বলেই উল্লেখ করেছেন। কারণ ঘরে বন্ধ করে একজন ব্যক্তিকে মারধর করল বেশ কয়েকজন বলে অভিযোগ। রবিবার রাতে ব্যারাকপুরের ওল্ড ক্যালকাটা রোডের সুকান্তপল্লী এলাকায় পুজো কমিটি রয়েছে। মৃত তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীর স্ত্রী এখানের ক্লাবের সদস্যা। এই ক্লাবের দুর্গাপুজো কমিটি গঠন করা নিয়ে বৈঠক ছিল। সন্ধ্যায় পুজো কমিটির দখল নিতে স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের কাউন্সিলর মৌসুমী মুখোপাধ্যায়, তাঁর স্বামী–সহ দলবল নিয়ে বৈঠকে হাজির হয়। তখনই বচসা তুঙ্গে ওঠে। আর জোর করে বৈঠকের ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাইরের তখন কাউন্সিলরের দলবল। স্ত্রীকে বৈঠকে আটকে রাখার খবর পেয়ে ছুটে আসেন তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী পার্থ চৌধুরী। তিনি এসে এসবের প্রতিবাদ করতেই কাউন্সিলরের অনুগামীরা তখন তাঁকে বেধড়ক মারধর করে বলে অভিযোগ উঠেছে।
আরও পড়ুন: পার্ক সার্কাসে মাঝরাতে দূতাবাসের গাড়ির তাণ্ডব, গার্ডরেল ভেঙে ধাক্কা মেরে বেরিয়ে গেল
এই ঘটনা নিয়ে শোরগোল ছড়িয়ে পড়তেই পুলিশে খবর যায়। যদিও পুলিশ এখনও তেমন কোনও পদক্ষেপ করেনি বলেই অভিযোগ। এই বিষয়ে আগের পুজো কমিটির সভাপতি সঞ্চিতা কুমার বলেন, ‘তৃণমূল কংগ্রেস কাউন্সিলর মৌসুমী মুখোপাধ্যায় আগে বলেছিলেন, তিনি পুজোয় থাকবেন না। এবার যখন কমিটি গঠন করা নিয়ে বৈঠক শুরু হয় তখন তাঁর স্বামী–সহ দলবল নিয়ে হাজির হয়। আর মতপার্থক্য দেখা দিতেই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর বাইরে পার্থকে মারধর করা হচ্ছে বলে খবর পাই। বেরতে চাইলে আমাকে এবং পার্থর স্ত্রীকেও বেরতে দেওয়া হয়নি। পুজো কমিটি দখল করবে বলেই কাউন্সিলর দলবল নিয়ে এসেছিল।’
অনেকেই এই ঘটনার পর কাউন্সিলর মৌসুমী মুখোপাধ্যায়কে কাঠগড়ায় তুলেছেন। প্রচণ্ড মারধরের জেরেই অচৈতন্য হয়ে পড়েন পার্থ বলে অভিযোগ। তখন তাঁকে উদ্ধার করে ব্যারাকপুর বিএন বসু মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এই ঘটনার পর হাসপাতালে যান ব্যারাকপুর পুরসভার চেয়ারম্যান উত্তম দাস। তাঁর বক্তব্য, ‘পুজো কমিটি গঠন নিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। হাসপাতালে এসে শুনলাম ওই কর্মী মৃত। তবে তাঁর শরীরে বাহ্যিক কোনও আঘাত মেলেনি। হয়ত মারামারিতেই হার্ট অ্যাটাক করেছে। তবে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলেই সঠিক কারণ জানা যাবে।’