সন্দেশখালির ঝড় সামলে কয়েক মাস আগেই বসিরহাটে তৃণমূল কংগ্রেসকে জিতিয়েছিলেন। বুধবার দুপুরে নিজের বাড়িতে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন সেই সাংসদ হাজি নুরুল ইসলাম। সূত্রের খবর, দীর্ঘদিন ধরে যকৃতের ক্যানসারে ভুগছিলেন তৃণমূল সাংসদ। আজ দুপুরে প্রয়াত হয়েছেন। বয়স হয়েছিল ৬১। তাঁর প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, 'আমার শ্রদ্ধেয় সহকর্মী তথা আমাদের বসিরহাটের সাংসদ হাজি শেখ নুরুল ইসলামের প্রয়াণের খবরে আমি গভীরভাবে শোকাহত। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকায় একজন সমাজসেবক ছিলেন। সেই কাজে নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন। পিছিয়ে পড়া এলাকার গরিব মানুষের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতেন। তাঁর মতো নেতার অভাব অনুভব করবেন বসিরহাটের মানুষ। তাঁর পরিবার, বন্ধু-বান্ধব এবং সহকর্মীদের সমবেদনা জানাচ্ছি।'
মমতার ইচ্ছায় ‘কঠিন’ বসিরহাটে প্রার্থী নুরুল
তৃণমূল সূত্রের খবর, মমতার ইচ্ছাতেই ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বসিরহাট কেন্দ্র থেকে নুরুলকে প্রার্থী করা হয়েছিল। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হলেও নুসরত জাহানকে ছাঁটাই করে দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ নুরুলেই আস্থা রেখেছিলেন মমতারা।
৩.৩৩ লাখের বেশি ভোট জিতেছিলেন নুরুল
যে লোকসভা কেন্দ্রের দিকে পুরো দেশের নজর ছিল। কারণ সন্দেশখালি-কাণ্ডে উত্তাল হয়ে উঠেছিল পুরো দেশ। সন্দেশখালি নিয়ে তৃণমূলকে নিয়মিত আক্রমণ শানাতেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। সেই প্রবল চাপের মধ্যেই বিপুল ভোটে বসিরহাটে তৃণমূলকে জিতিয়েছিলেন নুরুল। বিজেপি প্রার্থী তথা সন্দেশখালি আন্দোলনের অন্যতম 'মুখ' রেখা পাত্রকে ৩,৩৩,৫৪৭ ভোটে হারিয়ে দিয়েছিলেন। যদিও বিরোধীরা ভোটে লাগামছাড়া সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছিলেন।
দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন নুরুল
তবে লোকসভা নির্বাচনের প্রচার-পর্বের সময় অসুস্থ ছিলেন নুরুল। জোরকদমে প্রচারও সারতে পারেননি। দিল্লি এবং মুম্বইয়ের হাসপাতালেও ভরতি করা হয়েছিল তাঁকে। বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালেও চিকিৎসা চলেছিল নুরুলের।
দীর্ঘ অসুস্থতার পরে আজ দুপুর ১ টা ১৫ মিনিট নাগাদ দত্তপুকুরে বয়রা গ্রামে নিজের বাড়িতেই শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন নুরুল। তাঁর প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘মা, মাটি, মানুষের ভাবাদর্শের সত্যিকারের প্রতিনিধি ছিলেন উনি। মানুষের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন। এমনকী নিজের জীবনের শেষ কয়েকটা দিনেও মানুষের জন্য কাজ করে গিয়েছেন।’
নুরুলের রাজনৈতিক জীবনের ইতিবৃত্ত
১) ২০০৯ সালের লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়িয়েছিলেন। জিতেছিলেন ভোটে।
২) ২০১৪ সালে তাঁকে জঙ্গিপুুর থেকে টিকিট দেওয়া হয়েছিল। তবে হেরে গিয়েছিলেন।
৩) ২০১৬ সালে হাড়োয়া বিধানসভায় তৃণমূলের টিকিটে লড়াই করেছিলেন। পাঁচ বছর আগে যে কেন্দ্রে তৃণমূলের জয়ের মার্জিন ছিল ১,২০০, সেটা বেড়ে ৪৩,০০০-তে পৌঁছে গিয়েছিল।
৪) ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটেও হাড়োয়া থেকে লড়াই করেছিলেন। তারপর ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে তাঁকে বসিরহাটের টিকিট দেওয়া হয়েছিল।