শনিবার ভরদুপুরে বেলঘরিয়ার রথতলা এলকায় ব্যবসায়ীর গাড়িতে গুলি চালানোর ঘটনায় শোরগোল পড়েছিল। এবার তদন্তে নেমে দেখা গেল এই ঘটনার সঙ্গে যোগ রয়েছে বিহারে জেলবন্দি কুখ্যাত গ্যাংস্টারের। এমনটাই প্রাথমিকভাবে মনে করছে পুলিশ। আক্রান্ত ব্যবসায়ী অজয় মণ্ডলের অভিযোগ, থানায় বসে থাকাকালীনই ফোনে তাঁকে হিন্দিতে হুমকি দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। প্রাণঘাতী হামলা থেকে বেঁচে বেলঘরিয়া থানায় বসে তখন ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছিলেন আতঙ্কিত ব্যবসায়ী অজয় মণ্ডল। তখনই মোবাইল ফোনটা বেজে উঠল। অজয়বাবু ফোনটা ধরা মাত্রই, অপরপ্রান্ত থেকে এল প্রাণনাশের হুমকি।
এদিকে বেলঘরিয়া থানার ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে রথতলা মোড়ের কাছে গাড়ি চড়ে যাচ্ছিলেন ব্যবসায়ী অজয় মণ্ডল। আগরপাড়ায় তাঁর গাড়ির শোরুম আছে। তখনই মোটরবাইকে চড়ে তিন যুবক গাড়ির কাছে আসে এবং বিলাসবহুল গাড়ি লক্ষ্য করে পর পর আট রাউন্ড গুলি চালায় বলে অভিযোগ। তারপরই আতঙ্কিত অবস্থায় বেলঘরিয়া থানায় পৌঁছন তিনি। পুলিশ গাড়িতে থাকা বুলেট পরীক্ষা করেন। তারপর চম্পট দেয় বন্দুকবাজরা। তারপর থানাতে বসে থাকার সময়ই এল ফোন। যেখানে ব্যবসায়ী অজয় মণ্ডলকে বলা হয়, ‘বেউর সে বোল রাহা হু। ইস বার তো বচ গ্যয়ে। লেকিন আগলিবার কৌন বাঁচায়েগা।’ যার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায়, ‘এবার বেঁচে গেলি, পরেরবার কে বাঁচাবে।’
আরও পড়ুন: কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের কর্মসূচিতে রদবদল, কেন এমন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হল?
অন্যদিকে এই ঘটনায় এখনও কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। তবে আটক করা হয়েছে দু’জনকে। তাদের জেরা করা হচ্ছে। মোবাইল স্ক্রিনে ভেসে ওঠা নম্বর ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল। এটা ইউক্রেনের কোনও ই–সিমের কল বলে জানতে পারছেন তদন্তকারীরা। বেউর মানে তো সেই জেলবন্দি গ্যাংস্টার সুবোধ সিং। কুখ্যাত এই অপরাধী গত ৬ বছর ধরে বেউর জেলেই বন্দি। আর সেই জেলকে ‘আশ্রয়স্থল’ করে খুন, অপহরণ, তোলাবাজি, সোনার দোকানে ডাকাতি করে চলেছে সুবোধ সিংয়ের গ্যাং। নিজে ভিতরে থাকলেও বিকাশ সিং, দুলারা সিং, কিষন দুবের মতো শাগরেদরা বাইরে থেকে এই কাজ করে চলেছে।
এছাড়া ব্যারাকপুর, টিটাগড় এলাকায় কাউন্সিলর খুন থেকে শুটআউট, তোলাবাজি সবকিছুর পিছনেই নাম জড়িয়েছে সুবোধ সিংয়ের। বিহারের বাসিন্দার বাংলা যোগ বেশ সাংঘাতিক। তার জেরেই একের পর এক অপরাধে জড়িয়েছে সুবোধ। এখন বিহারের জেলে বন্দি। কিন্তু সেখান থেকেই অপারেশন চালিয়ে যাচ্ছে সুবোধ সিং। ব্যবসায়ী অজয় মণ্ডলের কাছে ৫০ লক্ষ টাকা তোলা চাওয়া হয়েছিল। আর তা না দেওয়ায় এই হামলা বলে মনে করা হচ্ছে। টিটাগড়ের বিজেপি নেতা মণীশ শুক্লা খুনের ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল সুবোধ ও তার দলবলের।