‘বহিরাগত’ তত্ত্ব নিয়ে এমনিতেই রাজ্য-রাজনীতিতে টানাপোড়েন চরমে উঠেছে। তাতে অবশ্য ভ্রূক্ষেপ করছে না বিজেপি। বরং আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনের জন্য দিল্লি এবং অন্যান্য রাজ্য থেকে বাংলায় ২৯৪ জন বিজেপি নেতা আসতে চলেছেন। তাৎপর্যপূর্ণভাবে বাংলায় বিধানসভা আসনের সংখ্যাও ২৯৪।
বঙ্গ বিজেপির প্রথমসারির এক নেতা জানিয়েছেন, জেলা কমিটি তো থাকছেই। সেই সঙ্গে প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য ৪৫ সদস্যের একটি দল গঠন করা হচ্ছে। নাম গোপন রাখার শর্তে তিনি বলেন, ‘আগামী ২৬ নভেম্বর থেকে বিভিন্ন রাজ্যের নেতারা আসার কথা আছে। আমাদের জানানো হয়েছে যে দিল্লি থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, কেন্দ্রীয় নেতা এবং উত্তরপ্রদেশ, বিহার, গুজরাত এবং কর্নাটক-সহ অন্যান্য রাজ্য থেকে নেতা-মন্ত্রীরা আসবেন।’
ইতিমধ্যে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে জানানো হয়েছে, প্রতি মাসে বঙ্গে আসবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বা বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। প্রতিবার রাজ্যে কমপক্ষে দু'দিন থাকবে। ওই বিজেপি নেতা বলেন, ‘শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস কল্পনা করতে পারছে না যে আগামী পাঁচ মাসে কীভাবে ভোটে লড়াইয়ের জমি প্রস্তুত করবে বিজেপি। কলকাতা সফরের সময় শাহ জানিয়েছেন যে গতবার লোকসভা ভোটের থেকেও এবার আমাদের প্রচারের ব্যাপকতা আরও বেশি হবে। যে লোকসভা ভোটে আমরা ৪২ টির মধ্যে ১৮ টি লোকসভা আসনে জিতেছিলাম।’
নামভারী নেতাদের পাশাপাশি তৃণমূল স্তরে সংগঠন গড়ে তোলার জন্য বাইরে থেকে বড় সংখ্যায় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) প্রচারকদের পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বঙ্গের নেতারা। রাজ্য বিজেপির দ্বিতীয় নেতা বলেন, ‘স্থানীয় নেতারা তাঁদের বেছে নেবেন। জাতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষের নেতৃৃত্বে যে কেন্দ্রীয় দল আছে, সেই দলের সদস্যরা নির্বাচন করেছেন।’
সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ বৈঠকে থাকা রাজ্যস্তরের তৃতীয় এক নেতা বলেন, ‘আমরা তৃণমূল স্তরে দল গঠন করব। দলের প্রচার এবং অর্থ সংগ্রহের উপর নজরদারি, বুথে সাংগঠনিক কাঠামো এবং ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য পৃথক কমিটি থাকবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের উপর বাড়তি জোর দেওয়া হয়েছে। সেজন্যই জাতীয় আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্যকে বাংলার বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’
তাৎপর্যপূর্ণভাবে অধিকাংশ বিজেপি নেতারা হোটেল বা বেসরকারি অতিথিশালায় উঠবেন না। তৃতীয় নেতা বলেন, ‘তাঁরা স্থানীয় আরএসএস প্রচারক বা বিজেপি কর্মীদের বাড়িতে থাকবেন।’ রাজ্য বিজেপি নেতারা জানিয়েছেন, ভোট সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ এবং মূল্যায়নের জন্য তিনটি পেশাদারি সংস্থাকে নিয়োগ করা হয়েছে। একইসঙ্গে তাঁরা জানিয়েছেন, রাজ্য সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী, ১০ জন সম্পাদক এবং দু'জন কোষাধ্যক্ষ ছাড়া রাজ্য কমিটিতেও কিছুটা পরিবর্তন করা হতে পারে।
বিজেপির সেই আক্রমণাত্মক কৌশল নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ও বিশেষজ্ঞ উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘অখিলেশ যাদব এবং তাঁর সহযোগীদের হারানোর জন্য উত্তরপ্রদেেশেও একইরকম পন্থা নিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হল যে উত্তরপ্রদেশে শাসনের অভিজ্ঞতা আছে বিজেপির। তারা কখনও বাংলায় ক্ষমতায় আসেনি। তবে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের ফল অনুযায়ী, ১২৫ টিরও বেশি আসনে তৃণমূল কংগ্রেসের থেকে এগিয়ে আছে বিজেপি। এটা সম্ভব হয়েছে কারণ যে ভোটাররা কোনও দলের সমর্থক নন, তাঁরা বিজেপির পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। ভোটব্যাঙ্কের সবথেকে বড় অংশ এই ভোটাররাই। প্রত্যেক দলের নিজস্ব ভোটব্যাঙ্ক আছে। বিকল্প হিসেবে বিজেপিকে দোদুল্যমান ভোটারদের কাছে নিজেদের তুলে ধরতে হবে।’