'স্বাস্থ্যসাথী'-র আওতায় চিকিৎসার খরচ খতিয়ে দেখার আবেদন জানিয়েছিল কয়েকটি হাসপাতাল। তার ভিত্তিতে মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করল রাজ্য সরকার। সেই কমিটি হাসপাতালগুলির খরচ পর্যালোচনা করবে।
বিধানসভা ভোটের আগে ঢাকঢোল পিটিয়ে রাজ্যের সব মানুষকে 'স্বাস্থ্যসাথী'-র আওতায় আনার ঘোষণা করে রাজ্য সরকার। সেই প্রকল্পের আওতায় নিখরচায় বছরে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা পাওয়ার কথা। তা সত্ত্বেও সেই স্বাস্থ্যবিমার কার্ড নিয়ে গিয়ে কাউকে কাউকে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছিল। কয়েকটি ক্ষেত্রে অভিযোগ ওঠে যে 'স্বাস্থ্যসাথী'-র কার্ড থাকা সত্ত্বেও কোনও লাভ হয়নি। উলটে বাড়তি খরচ করে হাসপাতালে চিকিৎসা করতে হচ্ছে। অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। মূলত বেসরকারি হাসপাতালের দিকেই একাধিকবার আঙুল তুলেছেন ভুক্তভোগীরা। তারপর নবান্নের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়, 'স্বাস্থ্যসাথী'-র আওতায় চিকিৎসা করতে গেলে কোনও রোগীকে ফেরানো যাবে। বাধ্যতামূলকভাবে পরিষেবা দিতে হবে। তা সত্ত্বেও পরিস্থিতির তেমন হেরফের হয়নি।
তারইমধ্যে বৃহস্পতিবার কড়া সুরে মুখ্যসচিব জানান, মন্ত্রিসভার বৈঠকে ঠিক হয়েছে যে সমস্ত সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতাল আবশ্যিকভাবে স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় থাকবে। তার জন্য যত খরচ হবে, তা যাতে বরাদ্দ করা হয়, সে বিষয়ে মন্ত্রিসভায় নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 'স্বাস্থ্যসাথী'-কে স্বাস্থ্য পরিষেবার গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বাধ্যতামূলকভাবে পরিষেবা প্রদানের হুঁশিয়ারি দিলেও কিছুটা সুর নরম করে নবান্নের তরফে জানানো হয়েছে, হাসপাতালগুলি চিকিৎসার খরচ নিয়ে যে প্রশ্ন তুলেছিল, তা খতিয়ে দেখার জন্য একটি কমিটি তৈরি করা হচ্ছে। মুখ্যসচিবের নেতৃত্বাধীন সেই কমিটিতে থাকবেন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। হাসপাতালগুলির সঙ্গে সেই কমিটির সদস্যরা আলোচনা করবেন। তার ভিত্তিতে চিকিৎসার খরচের জন্য একটি মূল্য ধার্য করা হবে।
মমতা আরও ব্যাখ্যা করে জানান, ২০১৬-১৭ সালে যখন প্রকল্পের সূচনা হয়েছিল, তখন চিকিৎসার খরচের জন্য একটি মূল্য ধার্য করা হয়েছিল। এখন রাজ্যের ১০ কোটি মানুষই প্রকল্পের আওতায় আসায় নতুন করে ‘রেট’ ঠিক করতে হবে। রোগী এবং হাসপাতালের স্বার্থ পুরোপুরি ক্ষুণ্ণ না করে খরচের ক্ষেত্রে বজায় রাখা হবে সামঞ্জস্য। পাশাপাশি বিরোধীদের তোপ দেগে মমতা দাবি করেন, 'স্বাস্থ্যসাথী'-র জন্য রাজ্যের কোষাগার থেকে বাড়তি ২,৫০০ কোটি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তুলে ধরা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, ‘১০,০০০-এ কোথাও যদিএ একটা ভুল থাকে, সেটাকে সংশোধন করে নেবেন। এটায় লজ্জার তো কোনও কারণ নেই। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু তো বলেছিলেন, রাইট টু মেক ব্লান্ডার ফর ইউথ। যে কেউ সাংঘাতিক ভুল করতে পারেন, যদি কোনও সাংঘাতিক ভুল হয়, তাহলে যে কেউ ঠিক করতে পারেন।’