ঊর্মিলা এখন একা। মন ভাল নেই। কারণ তাকে রেখে দিয়ে চলে গিয়েছে লক্ষ্মী। তখন থেকে আর খোশমেজাজে দেখা যায় না তাকে। আর ঊর্মিলার এমন আচরণের জেরে দু’মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে হাতির পিঠে ভ্রমণ। তার ফলে বেঙ্গল সাফারি পার্কে আগত পর্যটকরা এখন হতাশ। কারণ ২০২৪ সালের ১৬ নভেম্বর মৃত্যু হয় কুনকি হাতি, নাম লক্ষ্মী। বার্ধক্যজনিত কারণে তার মৃত্যু হয়েছিল। তারপর থেকে বেঙ্গল সাফারি পার্কে একা হয়ে যায় আর একটি কুনকি হাতি ঊর্মিলা। একে মন ভাল নেই বন্ধুকে হারিয়ে। তার উপর বয়সও অনেকটাই বেড়েছে। তাই একা পর্যটকদের এত চাপ নিতে পারে না সে। তাই উর্মিলাকে দিয়ে সাফারি করানো যাচ্ছে না। তার জেরে সবদিক বিবেচনা করে হাতি সাফারি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেঙ্গল সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ। এটাই পর্যটকদের হতাশ করেছে।
লক্ষ্মীর চলে যাওয়ার পর থেকেই উর্মিলা নাকি বেঁকে বসেছিল এই সাফারির কাজ থেকে বলে খবর। তবুও অনেক বুঝিয়ে, মন ভাল করে আবার নামানো হয়েছিল উর্মিলাকে হাতি সাফারিতে। কিন্তু বেশি দিন টানতে পারল না ‘সাথীহারা’ উর্মিলা। তাই এখন থেকে উর্মিলা অবসর জীবন কাটাচ্ছে। যদিও তার আতিথেয়তায়, সেবা–যত্নে কোনও খামতি রাখা হয়নি। সকাল–দুপুর–বিকেল–রাত্রি উর্মিলাকে খাওয়া দাওয়া করানো হয়। প্রায়ই চেকআপ করা হয় শরীর–স্বাস্থ্যের। আর পর্যটকদের জন্য সাফারির ভিতরে মুক্ত বনাঞ্চলে ছেড়ে রাখা হয়েছে উর্মিলাকে। যাতে তাকে দেখে আনন্দ উপভোগ করতে পারে। অনেকটা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো। যদিও বেঙ্গল সাফারি পার্কে আবার হাতি সাফারি শুরু করতে কেন্দ্রীয় জু–অথরিটির কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে রাজ্য জু–অথরিটি এবং বন দফতর।
এবার শীতে বেঙ্গল সাফারি পার্কে ভাল ভিড় হয়েছিল। কিন্তু এলিফ্যান্ট সাফারি করানো সম্ভব হয়নি। তাই পর্যটকরা নিজের মনে বনাঞ্চলে ঘুরে ফিরে এসেছেন। অনেকে খোঁজ করেছেন কবে আবার শুরু হবে এলিফ্যান্ট সাফারি? যদিও তার কোনও সদুত্তর মেলেনি এখনও। বন দফতর সূত্রে খবর, বেঙ্গল সাফারি পার্কে হাতি সাফারি করার জন্য অন্তত চারটি হাতির প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এখন হাতির সংখ্যা কম থাকায় কোথা থেকে হাতি আনা হবে সেটা নিয়ে আলোচনা চলছে। যদিও হাতি সাফারি ছাড়াই ডিসেম্বর মাসে ভালই আয় করেছে বেঙ্গল সাফারি পার্ক। কিন্তু সম্প্রতি বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা দাবি করেছিলেন, বাংলায় হাতির সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। আবার কেন্দ্রীয় সরকার হাতি নিয়ে গাইডলাইন পাঠিয়েছিল। তাহলে হাতির সংখ্যা কম কেন বলা হচ্ছে?
হাতির সংখ্যা বাংলায় বেড়েছে বলেই দাবি করা হয়েছিল। সেক্ষেত্রে উর্মিলাকে বাদ দিয়েই তো এলিফ্যান্ট সাফারি করা সম্ভব। এইসব প্রশ্ন যখন উঠছে তখন ঠিক হয়েছে, ঊর্মিলার জন্য গরুমারা অথবা জলদাপাড়া থেকে একজোড়া হাতি পাঠানো হবে। এই ভাবনা বন দফতরের। এই বিষয়ে বেঙ্গল সাফারি পার্কের অধিকর্তা বিজয় কুমার বলেন, ‘উর্মিলাকে দিয়ে হাতি সাফারি করানো বন্ধ রাখা হয়েছে। একা উর্মিলার পক্ষে সাফারি করা সম্ভবও না। তবে আমরা জু–অথরিটির সঙ্গে আলোচনা করে হাতি আনার চেষ্টা করছি।’