পুরুলিয়া সহ গোটা দক্ষিণ বাঁকুড়াজুড়ে কয়েক বছর আগেও ভাদ্র সংক্রান্তির রাতে জামজমক করে পালিত হত ভাদুপূজা। মেতে উঠত ভাদুগানে কচি থেকে বয়স্ক সবাই। কিন্তু ক্রমশ বিরল হচ্ছে সেই ছবি। সেভাবে ঘটা করে ভাদুপূজার প্রচলন আর দেখা যায় না জঙ্গলমহলে। কিছু কিছু এলাকায় দেখা গেলেও পূজার জৌলুস কমেছে একেবারে। ভাদুপূজোর প্রচলন কমে যাওয়ায় বিক্রি কমেছে ভাদুর প্রতিমার। ক্ষতির মুখে ভাদু শিল্পীরা। এমনই দাবি করছেন বাঁকুড়ার পাঁচমুড়া ও বিবড়দা এলাকার ভাদু শিল্পীরা
কথিত আছে মানভূমের পঞ্চকোটের রাজা নীলমনি সিংদেওর তৃতীয় কন্যা ভদ্রাবতী তাঁর হবু স্বামীর অকাল প্রয়াণে শোকে কাতর নিজেও আত্মহত্যা করেন। ভদ্রাবতীর কথা জনমানসে স্মরণ করিয়ে রাখতে ভাদুগানের প্রচলন করেন রাজা। তার পর থেকে আজও ভাদুগানের প্রচলন রয়েছে রাঢ়বঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায়। যদিও ভাদুর কাহিনী নিয়ে আরও নানান তথ্য পাওয়া। ভাদ্র সংক্রান্তির আগের রাতে রঙ্গিন কাগজ বা কাপড় দিয়ে ভাদুর একটি মাটির মুর্তি রেখে ও তার সামনে শুকনো খাবার রেখে রাতভর ধরে চলে ভাদু গান। গৃহিনী ও কুমারীরা পাঁচালির সুরে নানা ভাদুগান গেয়ে থাকেন।
CBI হেফাজতে শান্তিপ্রসাদ, নিজাম প্যালেসের বাসিন্দা হলেন কেলেঙ্কারির ৩ কান্ডারি
ভাদু নিয়ে মানুষের মধ্যে দেখা যেত প্রচুর আবেগ এবং চল। সেই সময় বাজারে ভাদু মুর্তি না পেয়ে ফিরে যেত অনেকে। বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় সেই সব অতীত। বিক্রি নেই সেভাবে। অতীতে জেলার পাঁচমুড়ার ভাদু শিল্পীরা এই মরসুমে ভাদু বিক্রি করে আর্থিক ভাবে বেশ লাভবান হতেন। কিন্তু বর্তমানে ভাদু বিক্রি না হওয়ায় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তাঁরা।
ভাদুশিল্পী জয়দেব কুম্ভকার জানান, আগে তারা ছোট ও বড়ো মিলিয়ে ছশো থেকে আটশো ভাদু প্রতিমা তৈরি করতেন। তাও মানুষ ভাদু পূজার দিন প্রতিমা না পেয়ে ফিরে যেত। বর্তমানে দুশো - আড়াইশো ভাদু তৈরি করেও সব বিক্রি করতে পারেন না। এখনকার ছেলে মেয়েরা ও বাড়ির বয়স্করাও ভাদু গান চল থেকে দূরে সরে গেছে। এজন্য আধুনিক ব্যস্ত জীবনকে দায়ী করেছেন তিনি।
আরেক শিল্পী সাগর কুম্ভকার বলেন, ‘ভাদু বানিয়ে আগের মতো লাভ হয় না। মানুষের ভাদুপুজোয় মন নেই। মানুষ মূলধারার সঙ্গে যুক্ত হতে চায়। তারা টিভিতে বা ফোনে যা দেখে তাকেই অনুকরণ করে। যার জেরে ক্রমশ কমছে ভাদু জনপ্রিয়তা।’