তাঁর আগমনে এখন বীরভূমে উৎসবের মেজাজ দেখা দিয়েছে। আট থেকে আশি রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে গুড়বাতাসা, নকুলদানা নিয়ে। এমনকী বেজে উঠেছে চড়াম চড়ার ঢাক বাদ্যি। হ্যাঁ, তিনি বীরভূম তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। গরুপাচার মামলায় অভিযুক্ত হয়ে তিহার জেলে ঠাঁই হয়েছিল। তখন দলীয় কার্যালয় থেকে সরানো হয়েছিল অনুব্রত মণ্ডলের ছবি। সেখানে জায়গায় পেয়েছিল জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের কোর কমিটির সদস্য অভিজিৎ সিনহা, চন্দ্রনাথ সিনহা, সুদীপ্ত ঘোষ এবং আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। কেষ্ট এবার ফিরে এসেছেন। আর তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই দেখা গেল, বাকিরা সাইডলাইনে। অনুব্রত মণ্ডলের একের পর এক ছবি দিয়ে সাজানো হচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যালয়। বোলপুর সিউড়ি দুই জায়গার পার্টি অফিসেই সেটা দেখা গেল। বুধবার সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে যাওয়ার কথা তাঁর।
টানা ১৮ মাস পর জামিনে মুক্তি পেয়ে মঙ্গলবার সকন্যা বাড়ি ফেরেন কেষ্ট মণ্ডল। আর অনুগামীদের সঙ্গে দেখা করেন। তবে দলের বড় কোনও নেতার সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলেননি বীরভূমের বাঘ। তবে বুধবার বোলপুর দলীয় কার্যালয়ে যেতে পারেন অনুব্রত বলে সূত্রের খবর। তাই সাজ সাজ রব কার্যালয়ে। অনুব্রত মণ্ডলের একের পর এক ছবি দিয়ে ভরানো হচ্ছে দলীয় কার্যালয়। তাৎপর্যপূর্ণভাবে সরানো হল জেলা কোর কমিটির সদস্যদের ছবি। যে কোর কমিটি তৈরি করেছেন খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও মঙ্গলবার জেলা সফরে আসা মুখ্যমন্ত্রীর মুখেও নাম শোনা যায়নি স্নেহের কেষ্টর।
আরও পড়ুন: দুর্গাপুজোর প্রাক্কালে বন্ধ হয়ে গেল ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক, প্রবল বর্ষণে ২৮ মাইলে ধস
আজ বোলপুর দলীয় কার্যালয়ে যেতে পারেন অনুব্রত মণ্ডল শুনেই সাজানো হচ্ছে পার্টি অফিস। ২০১৮ সালে অনুব্রত মণ্ডলই উদ্বোধন করেছিলেন এই বীরভূম জেলা তৃণমূল ভবনের। রোজ সেখানেই বসতেন। আবার আসছেন। পুরনো মেজাজে কেষ্ট। এখন যে ছবি লাগানো হয়েছে তাতে কেষ্টর পাশে রয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের অন্য কোনও মুখের জায়গা নেই সেখানে। তাই অনেকে রসিকতা করে বলছেন, ‘বড় ভাই সাইড, ছোট ভাই আসছে।’ আসলে বড় বড় নেতা–মন্ত্রী–বিধায়ক–সাংসদদের প্রতি এমন বার্তাই দিচ্ছেন কেষ্ট অনুগামীরা।
এই পার্টি অফিস আবার ঝাঁ–চকচকে করতে মাঠে নেমেছেন রাজমিস্ত্রি। ফিনাইল দিয়ে ধোয়া হচ্ছে মেঝে। বড় বড় কাটআউট সেখানে লাগানো হয়েছে। পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে চেয়ার–টেবিল এবং আসবাবপত্র। বাড়ি ফিরে অনুব্রত মণ্ডল সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছিলাম, আছি, থাকব। রাজ্য তো বটেই গোটা দেশের মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভালবাসেন।’ মমতা–অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া বাকি সব ছবি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। সুতরাং বীরভূম জুড়ে আবার কেষ্টময়। আবার মুখ্যমন্ত্রী বীরভূমে এসেছিলেন বন্যা পরিস্থিতি দেখতে। সেখানে কেষ্ট যাবেন কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার পায়ের অবস্থা ভাল নয়। পিঠেও ব্যথা আছে। শরীর ভাল থাকলে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাব।’ যদিও তা হয়নি।