বগটুই গণহত্যার ঘটনা স্মৃতির অন্তরালে চলে গেলেও ওই গ্রামের বাসিন্দারা তা আজও ভোলেননি। বগটুইয়ের সেই অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন তাঁর মা, বোন, দিদি, স্ত্রী, মেয়ে, জামাই–সহ ১০ জন আত্মীয়। একের পর এক বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। তারিখটা ছিল, ২০২২ সালের ২১ মার্চ। তখন জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ‘টিভি বিস্ফোরণের’ তত্ত্ব খাঁড়া করেছিলেন। যার জন্য অনু্ব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্বজনহারা মিহিলাল শেখ। তারপর কেটে গিয়েছে আড়াই বছর। অনুব্রত মণ্ডল তিহাড় জেল ঘুরে গ্রামে ফিরেছেন। আর শনিবারই সেই মিহিলালকে দেখা গেল, রামপুরহাটের তৃণমূল কংগ্রেসের পার্টি অফিসে অনুব্রত মণ্ডলের সামনে করজোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে। এই নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে।
২০২২ সালের ২১ মার্চ তৃণমূল কংগ্রেস নেতা ভাদু শেখ খুন হন। তারই প্রতিশোধে একের পর এক বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। যার জেরে মৃত্যুমিছিলের সাক্ষী থেকেছে রামপুরহাটের বগটুই গ্রাম। অনুব্রত মণ্ডলের মন্তব্যে তখন পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছিল। তখন তা কমব্যাট করতে খোদ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রামে গিয়ে স্বজনহারাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। আর চাকরি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। তখন ক্ষোভ কমে। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী মিহিলাল শেখ এবং স্বজনহারা একাধিক পরিবারের সদস্যরা তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিজেপি। এখন আবার মিহিলাল হাজির কেষ্টর কাছে। এই বিষয়ে তাঁর ব্যাখ্যা, ‘আমাদের চাকরি স্থায়ী করতে হবে। রাগ করে থাকলে হবে?’
আরও পড়ুন: একবছরে দ্বিগুণের বেশি বাড়ল গজরাজের সংখ্যা, কপালে ভাঁজ পড়েছে রাজ্য সরকারের
বগটুই গণহত্যার পর অনুব্রতর বিরুদ্ধে একাধিকবার ক্ষোভ উগরে দেন মিহিলাল। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মিহিলালের পরিবারের তিন সদস্য বিজেপির টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আর প্রচার করেন মিহিলাল। তাঁকেই শনিবার দেখা গেল অনুব্রতকে করজোড়ে নমস্কার করছেন। আবার তাঁর পাশেই বসেছিলেন বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। এই দ্বৈত চরিত্রে হাজির হয়ে মিহিলাল বলেন, ‘আমি ওখানে নিজের কাজে গিয়েছিলাম। পরবর্তীকালে টিভি বিস্ফোরণের কথা ওঁর বলা ঠিক হয়নি বলে উনি জানিয়েছিলেন। ওই বিষয় নিয়ে এখন আর আমি মাতামাতি করতে চাইছি না। এখন যে কাজ আছে সেগুলি ওঁদের দিয়েই করাতে হবে।’
বগটুই গণহত্যার পর পাঁড়ুইয়ের বাঁধনবগ্রামের বাসিন্দা, তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী হৃদয় ঘোষ তাঁর বাবার খুনের জন্য সরাসরি অনুব্রত মণ্ডলকেই দায়ী করেছিলেন। পরে সেই কেষ্ট শরণে গিয়ে সব মিটিয়ে নেন। এখন কসবা গ্রাম পঞ্চায়েতের পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল কংগ্রেস সদস্য তিনি। তবে মিহিলাল অবশ্য দাবি করেছেন তিনি বিজেপিতেই আছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘দল নিয়ে আমি আর মাতামাতি করছি না। যা হয়েছে সেটা ভোলার কথা নয়। এখন যেখানে সুবিধা হবে আমাকে সেখানে যেতে হবে। যদি আমার কাজটা উদ্ধার হয়ে যায়।’ আর অনুব্রত মণ্ডলের কথায়, ‘মিহিলাল যখন দলীয় কার্যালয়ে এসেছেন তখন আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতেই পারেন।’