রাজনীতিতে কেউ চিরশত্রু নয়—এই কথাটি বলেছিলেন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। এবার সেটা দেখা গেল বীরভূমের রাজনীতিতে। একদা অনুব্রত বিরোধী কাজলই কাছে চলে এলেন। আর অনুব্রতও কাছে টেনে নিলেন সেই কাজল শেখকেই। মিটে গেল দ্বৈরথ দুই যুযুধান প্রতিপক্ষের বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও এই মেলবন্ধনের কারিগর তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই তো অনুব্রত মণ্ডলের চরণ–যুগল স্পর্শ করে প্রণাম করলেন কাজল শেখ। আর দাদা অনুব্রতও কাজল শেখের মাথায় হাত রেখে করলেন আশীর্বাদ। জয়দেব–কেন্দুলির মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের এই ছবি এখন চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে। সৌজন্যের এই ঘটনাই বীরভূমের রাজনীতির হাওয়া–বদল ঘটালো বলে মনে করা হচ্ছে।
এই কাজল শেখই ছিলেন অনুব্রত মণ্ডলের প্রবল বিরোধী। আর অনুব্রত মণ্ডল তিহাড় রওনা দেওয়ার পরই সামনের সারিতে চলে আসেন কাজল শেখ। কিন্তু তিহাড় ফেরত অনুব্রত এখন অনেক নম্র মেজাজি। তার উপর নির্দেশ এসেছে তৃণমূল সুপ্রিমোর কাছ থেকে। সবাইকে নিয়ে চলতে হবে—বার্তা পাওয়ার পরই অনুব্রতকে বলতে শোনা গিয়েছিল, তিনি নেতা নন। একজন সাধারণ কর্মী। সবাইকে নিয়ে তিনি চলতে চান। দলে একটা নেতা সেটা হল—মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল হলেও তাই বাড়িতে ডেকে ছিলেন কাজল শেখকে। সেটা কিছুদিন আগের কথা। এবার জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখকেও এগিয়ে আসতে দেখা গেল। এটাই মিলন।
আরও পড়ুন: কলকাতা পুরসভার সামনেই ফুটপাত দখল হয়ে গিয়েছে, আবার পথ–যন্ত্রণায় পথচারীরা
একদিন আগেই নানুরে প্রাক্তন সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি রিঙ্কু চৌধুরীর উপর হামলা হয়। আর সেই হামলার পিছনে হাত ছিল কাজল শেখের অনুগামীদের বলে অভিযোগ ওঠে। রিঙ্কু অনুব্রত মণ্ডল অনুগামী হিসেবেই পরিচিত। প্রাক্তন জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আবদুল কেরিম খান অসুস্থ বলে তাঁকে দেখতে বাড়িতে যান রিঙ্কু চৌধুরী। এই আব্দুল কেরিম খানও অনুব্রত ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। আবদুল কেরিম খানকে দেখে বাড়ি ফেরার পথে রিঙ্কু চৌধুরী আক্রান্ত হন। রিঙ্কুর অভিযোগ, কয়েকজন ব্যক্তি তাঁর উপর চড়াও হয়। প্রত্যেকেই কাজল অনুগামী। অনুব্রতর অনুগামী হওয়ার জন্যই তাঁকে প্রাণে মেরে ফেলার চক্রান্ত হয়েছিল।
যদিও এই কাজ কাজল অনুগামীদের নয় বলেই একটা অংশ মনে করছেন। তাহলে তারা কারা? নানুরের তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্যের কথায়, ‘মারধরের ঘটনা আমার জানা নেই। তবে রিঙ্কুকে নানুরের বেশ কয়েকজন যুবক খোঁজ করছিলেন। কেন সেটা জানি না। কিছু অভিযোগ ছিল রিঙ্কুর বিরুদ্ধে। তাঁদের ফোন ধরছিলেন না। সেটা থেকেই বহিঃপ্রকাশ ঘটে থাকতে পারে হামলার ঘটনা। তবে রিঙ্কু এখন দলের কেউ নয়।’