কৃষ্ণ কল্যাণী, মুকুটমণি অধিকারীর পথে হেঁটে দলত্যাগ বিরোধী আইনের কোপ থেকে বাঁচতে এবার বিধায়ক পদে ইস্তফা দিলেন বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস। শুক্রবার বিধানসভার স্পিকারের কাছে ইস্তফা পত্র পেশ করেছেন তিনি। তাঁর ইস্তফায় বিধায়কশূন্য হল বাগদা।
দলবদলের কিস্সা
গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন বিশ্বজিৎবাবু। মুকুল রায়ের অনুগামী বলে পরিচিত বিশ্বজিতের দলবদলে অবশ্য অবাক হননি কেউ। তখন বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন তিনি। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে তাঁকে লাগোয়া কেন্দ্র বাগদা থেকে টিকিট দেয় বিজেপি। ভোটে তৃণমূল প্রার্থী পরিতোষ সাহাকে প্রায় ১০ হাজার ভোটে হারিয়ে দেন তিনি।
তবে ফল প্রকাশের কয়েক মাসের মধ্যেই মুকুল রায়ের মতো তৃণমূলে ফেরেন বিশ্বজিৎ। দলে ফিরেই বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতির দায়িত্ব পান তিনি। তবে অন্য অনেক দলবদলু বিধায়কের মতো তিনিও পদে ইস্তফা দেননি। লোকসভা নির্বাচনে এবার সেই বিশ্বজিৎকেই শান্তনু ঠাকুরের বিরুদ্ধে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। দীর্ঘদিন পর ঠাকুরবাড়ির বাইরে কাউকে প্রার্থী করেছে তারা। আর তৃণমূল প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে BJP দলত্যাগবিরোধী আইনে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। সেই সম্ভাবনা বিনাশ করতে কৃষ্ণ কল্যাণী ও মুকুটমণি অধিকারীর মতো বিধায়ক পদে ইস্তফা দিলেন তিনিও।
ধিক্কারের মুখে বিধায়ক
মাস কয়েক আগে নিজের বিধানসভা কেন্দ্রেই জনসংযোগে বেরিয়ে দলবদল করায় সাধারণ মানুষের কটাক্ষের মুখে পড়েছিলেন বিশ্বজিৎবাবু। এক ব্যক্তি তাঁকে বলেন, যে বিধায়ক ভোটে জিতে দল বদল করে তাকে আর কী বলব? জবাবে বিশ্বজিৎ বলেছিলেন, ‘বিধায়ক কোনও দলের হয় না।’ প্রশ্ন উঠছে, তাহলে তিনি এখন ইস্তফা দিলেন কেন?
তৃণমূলে ফেরার পর থেকে বিশ্বজিৎকে বারবার বলতে শোনা গিয়েছে, ‘বিজেপিতে যাওয়া ভুল ছিল। বিজেপি সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করে।’ এদিনও তিনি বলেন, ‘বিজেপিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। আশা করি বাগদার মানুষ আরও ভালো বিধায়ক পাবেন।’
লোকসভা নির্বাচনে মতুয়াদের গড় বলে পরিচিত বনগাঁ কেন্দ্র উদ্ধার এবার বড় চ্যালেঞ্জ তৃণমূলের সামনে। ভোটের মুখে CAA কার্যকর করে মতুয়া ঠাকুরবাড়ির দীর্ঘদিনের আন্দোলনকে স্বীকৃতি দিয়েছে বিজেপি। আর সেই বিজেপির টিকিটেই ফের প্রার্থী হয়েছেন ঠাকুরবাড়ির ছোট ছেলে শান্তনু। তৃণমূল CAA নিয়ে পালটা প্রচার করলেও তার ফল কতটা হবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে দলের একাংশের মধ্যেই। ফলে শেষ পর্যন্ত বনগাঁয় জিতলে দলে গুরুত্ব অনেকটা বাড়বে বিশ্বজিতের।