ভার্চুয়াল রাজনৈতিক ময়দানে বিজেপি ১০ গোল দিলেও বাস্তবের কাদাজলের মাঠে ১০০ গোলে তারা পরাজিত হল তৃণমূলের কাছে।
‘আমার পরিবার, বিজেপি পরিবার’–এর মতো টাটকা স্লোগান এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নতুন ছবি— দলের সদস্য সংখ্যা বাড়াতে নতুন হাতিয়ার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপি–র। বিশেষ নম্বরে মিস্ড কল দিয়ে বিজেপি–র সদস্য হওয়ার বার্তা দিয়ে বুধবার সারাদিন বিজেপি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারপর্ব চালায়। টুইট করেন পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা শিবপ্রকাশ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, দেবশ্রী চোধুরীরা।
এ দিকে, বুধবারই তৃণমূলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পুরুলিয়া বাঘমুন্ডির প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি ও বর্তমান সহ সভাপতি বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিতে চলেছেন। ৩১ জুলাই একই দিনে মুর্শিদাবাদে বহরমপুর টাউন বিজেপি–র সভাপতি বিশ্বরূপ ঘোষ এবং দক্ষিণ দিনাজপুরের ২ স্থানীয় বিজেপি নেতা তৃণমূলে যোগদান করেন। ৩ অগস্ট ১৪ জন বিজেপি কর্মীকে নিয়ে তৃণমূলের দলীয় পতাকা হাতে তুলে নেন আলিপুরদুয়ার কালচিনির বিজেপি নেতা সন্দীপ এক্কা।
৬ অগস্ট হয় বড়সড় পালাবদল। বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন করেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী হুমায়ুন কবীর। ৯ অগস্ট অনুগামীদের সঙ্গে নিয়ে ফের তৃণমূলে যোগ দান করেন জলপাইগুড়ির বলিরাম এক্কা। ওই একই দিনে বিজেপি–র বুথস্তরের কর্মীদের নিয়ে তৃণমূলে নাম লেখান ক্যানিংয়ের প্রাক্তন সিপিএম নেতা জয়দেব পুরকাইত। ৯ অগস্টই বারুইপুরে বিজেপি–র ৪০০–র বেশি কর্মী যোগ দেন তৃণমূলে।
এত কিছুর মধ্যে সেই ভার্চুয়াল আর মিস্ড কলেই আটকে থাকে বিজেপি–র দৌড়।
২০১৯–এর লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গের ৮টি আসনের মধ্যে ৭টি দখল করে বিজেপি। পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রও বিজেপি–র দখলে। বাঁকুড়া, মেদিনীপুর তথা পুরো জঙ্গলমহলেই বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে বিজেপি। তারই মধ্যে দলে ভাঙন ধরায় ফের মাটির তলায় তৃণমূল পা পেয়েছে বলেই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মত। অধ্যাপক উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, করোনা মহামারীর জেরে লকডাউনে শাসকদল হিসেবে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে তৃণমূল, যেখানে প্রধান বিরোধী দল হয়েও কিছুই করার নেই বিজেপি–র। তাই মানুষ তৃণমূলের দিকেই ঝুঁকছে বেশি।
যদিও দলবদলের এই প্রবণতা নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তিত নয় রাজ্য বিজেপি। দলের নেতা রাহুল সিনহা বলেন, ‘যাঁরা বিজেপি ছাড়ছে তাঁদের কেউই বড় কোনও নেতা নয়। তৃণমূলে ৫০ জন গেলে, ৫০০ জন বিজেপি–তে যোগদান করছে।’ তৃণমূল নেতা ও মন্ত্রী তাপস রায় এর পাল্টা বলেন, ‘বিজেপি–র অপসংস্কৃতি বরদাস্ত করতে না পেরেই ওই দল ছাড়ছে সকলে। তবে দলবদলের সঙ্গে নির্বাচনের কোনও যোগ নেই। ভোট না হলেও যাঁদের বিজেপি ছাড়ার কথা তাঁরা ছাড়বেই।’