সাংসদ জগন্নাথ সরকারের ডানা ছাঁটল বিজেপি। এমনকী ডানা ছাঁটা হল রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকারের ঘনিষ্ঠদেরই। একদিকে বাদ পড়লেন অনেকে, অন্যদিকে কম গুরুত্বপূর্ণ পদেও যেতে হল কাউকে–কাউকে। অসন্তুষ্ট হলেও মেনে নিতে হচ্ছে। এমনকী অনেকে ভেতরে ভেতরে ঠিক করেছেন এর জবাব নির্বাচনে দেবেন। আবার কেউ কেউ তৃণমূল কংগ্রেসে চলে যাবেন বলে তলে তলে কথা চালাচ্ছেন বলে সূত্রের খবর।
ইতিমধ্যেই হরিণঘাটা এবং কল্যাণী বিধানসভা কেন্দ্র জুড়ে গিয়েছে বনগাঁ সাংগঠনিক জেলায়। এই সমস্ত এলাকায় নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার একাধিক পদাধিকারী ছিলেন। তাই নদিয়ার দক্ষিণে দলের সংগঠনে ফের রদবদল অবশ্যম্ভাবী ছিল। সেই রদবদলে একাধিক পদাধিকারীর যেমন ঠাই হল না, তেমনই অনেককে সরতে হল কম গুরুত্বপূর্ণ পদে। ঘটনাচক্রে এঁদের বেশিরভাগই জগন্নাথের ঘনিষ্ঠ।
জগন্নাথ সরকার সাংসদ হওয়ার পরে তাঁর জায়গায় দক্ষিণ জেলা সভাপতি করা হয় বিরোধী গোষ্ঠীর মানবেন্দ্রনাথ রায়কে। মাস পাঁচেকের মধ্যে তাঁকে সরিয়ে ফের জেলা সভাপতি করা হয় জগন্নাথ–ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত অশোক চক্রবর্তীকে। সূত্রের খবর, সম্প্রতি এই অশোকের সঙ্গে জগন্নাথের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। তারপরই জেলার পদাধিকারীরা রাজ্য নেতৃত্বের কাছে অশোকের অপসারণ চেয়ে চিঠি পাঠান। এঁদের বেশিরভাগও সেই জগন্নাথের ঘনিষ্ঠ।
জগন্নাথ দীর্ঘদিন পদে থাকার সুবাদে এবং পরে সাংসদ হওয়ায় জেলা কমিটি এবং মণ্ডল স্তরেও তাঁর প্রভাব রয়েছে। মাঝে জগন্নাথ ঘনিষ্ঠ তিন মণ্ডল সভাপতিকে পদ থেকে সরানোয় ক্ষুব্ধ হন একাংশ। এবার রদবদল হল জেলা কমিটিতেও। দলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ সহ–সভাপতি পদে সরানো হল সাংসদ–ঘনিষ্ঠ মনোজ বিনকে। আর সহ–সভাপতি পঙ্কজ বসুকে কোনও পদেই রাখা হয়নি নতুন কমিটিতে। সাধারণ সম্পাদক পদে নিরঞ্জন বিশ্বাস রয়ে গিয়েছেন। লোকসভা নির্বাচনের পরে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া রানাঘাট ১ ব্লকের প্রদীপ সরকারকে জেলার সাধারণ সম্পাদকের মত গুরুত্বপূর্ণ পদে আনা হয়েছে। সম্পাদকমণ্ডলীতে এসেছেন কুপার্সের মণ্ডল সভাপতি দীপক দে। সম্পাদকমণ্ডলী থেকে বাদ পড়েছেন লোকসভা ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদীর সভায় কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া স্বপন ঘোষ এবং শান্তিপুরের নির্মল বিশ্বাস। তবে সহ-সভাপতি পদেই রয়ে গিয়েছেন জগন্নাথ ঘনিষ্ঠ আশিস উকিল ওরফে বিপুল।
সাংসদ জগন্নাথ সরকার অবশ্য দাবি করেন, ‘আমার লোক বলে কিছু নেই। আমরা সবাই বিজেপির লোক।’ তবে এই কম গুরুত্বপূর্ণ পদে যাওয়া নেতারা দলবদল করতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। তাতে আখেরে বিজেপির ক্ষতিই হবে বলে মনে করছেন জেলার রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।