ঝগড়া, মনোমালিন্য হলে দু’পক্ষকে ডেকে করমর্দন, কোলাকুলি করিয়ে সমস্যা মেটানোর রেওয়াজ এখনও চালু। আট থেকে আশি— সকল বয়সের ক্ষেত্রে এই ফর্মুলা এখনও দারুণভাবে কাজ করে। শুধু প্রয়োজন পড়ে একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তির। যাঁর মধ্যস্থতায় গলে যায় অভিমানের বরফ। এবার বঙ্গ বিজেপি–তে সেই নিরপেক্ষ ব্যক্তির ভূমিকা পালন করলেন বিজেপি–র কেন্দ্রীয় সম্পাদক এবং রাজ্যের সহকারী পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেনন। শুক্রবার খুবই সহজ এক সমীকরণে জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামী ও প্রাক্তন জেলা সভাপতি তথা বর্তমানে বিজেপি–র রাজ্য কমিটির সহ সভাপতি দীপেন প্রামাণিকের বহু পুরনো বিবাদ মিটিয়ে দিলেন তিনি।
বেশ কিছুদিন ধরে রাজ্য নেতাদের কাছে একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাচ্ছিলেন বাপি গোস্বামি ও দীপেন প্রামাণিকের অনুগামীরা। নালিশের বাহার এতোটাই যে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কানেও তা পৌঁছে যায়। শুক্রবার শিলিগুড়ির ঋষি ভবনে বিজেপি–র উত্তরবঙ্গ পদাধিকারীদের বৈঠকে এই বিবাদে ইতি টানতে অভিনব উদ্যোগ নেন অরবিন্দ মেনন। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈঠক চলাকালীন হঠাৎই বাপি ও দীপেনকে মঞ্চে ডাকেন শীর্ষস্তরের কেন্দ্রীয় নেতা। ঋষি ভবনের ওই সভাঘরে তখন গম্ভীর পরিবেশ। এর পরই বাপি গোস্বামী ও দীপেন প্রামাণিকের হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে তা একে অন্যের হাতে তুলে দিতে বলা হয়। সবাই অবাক। দু’জনেই একে অপরকে দিলেন ফুলের তোড়া।
এখানেই শেষ নয়। ভরা সভায় হঠাৎই দীপেন প্রামাণিককে বলা হয়, ‘আপনি বাপি গোস্বামীকে বলুন আই লাভ ইউ।’ শীর্ষ নেতার নির্দেশ। ফেলার সাধ্যি নেই। একপ্রকার আমতা–আমতা করেই দীপেনবাবু বলে দিলেন, ‘আই লাভ ইউ’। সঙ্গে সঙ্গে হাসি আর হাততালিতে ফেটে পড়ে সভাঘর। এবার পালা জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামীর। তিনিও একই নির্দেশ পালন করে প্রাক্তন জেলা সভপতিকে ‘আই লাভ ইউ’ বললেন। তখনও থামেনি হাততালি। এর পর পালা কোলাকুলির। কোভিড স্বাস্থ্যবিধিকে আড়ালে রেখে একে অপরকে ক্ষণিকের জন্য জড়িয়ে ধরলেন তাঁরা। আর সেই মুহূর্তেই কেন্দ্রীয় নেতার কড়া নির্দেশ, ‘বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত যেন আপনাদের বিচ্ছেদ না হয়।’
অরবিন্দ মেননের কথায় বাপি গোস্বামীর সঙ্গে ছবিও তুলছেন দীপেন প্রামাণিক। তিনি বলছিলেন, ‘আমাদের একসঙ্গে ডেকে ফুল দিয়েছেন অরবিন্দ মেননজি।’ পুরনো বিবাদকে সরিয়ে রেখে বিজেপি–র রাজ্য কমিটির সহ সভাপতি বলেন, ‘আমরা সকলে একসঙ্গেই চলি।’ এদিকে, বাপি গোস্বামীর কথায়, ‘আমি ও দীপেনদা তো একই পরিবারের সদস্য। পরিবারের সদস্যরা একে–অপরকে আই লাভ ইউ বলতেই পারে। যৌথ নেতৃত্বে আমাদের দল পরিচালিত হয়। আমি হোক বা দীপেনদা, আমাদের কারও একার দ্বারা দল চালানো সম্ভব নয়।’