এবার উত্তরকন্যা অভিযান করল বিজেপি। মেদিনীপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভার দিনেই এই অভিযানে ঝাঁপাল বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপির যুব মোর্চা কর্মসূচির ডাক দিলেও এখানে ছিলেন রাজ্য বিজেপির প্রথমসারির নেতারা।
সোমবার মেদিনীপুরে জনসভা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল নেত্রীর জনসভার পালটা কর্মসূচি হিসেবে উত্তরকন্যা অভিযানকে হাতিয়ার করেছিল রাজ্য বিজেপি। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আমফান ও দুর্নীতি, বেকারত্বের হার, চা শ্রমিকদের দুরবস্থা, উত্তরবঙ্গের মানুষকে বঞ্চনা–সহ একগুচ্ছ অভিযোগ তুলে উত্তরকন্যা অভিযান করা হল।
উত্তরকন্যা অভিযানে দু’দিক থেকে দুটি মিছিল করেন বিজেপি কর্মীরা। তবে সেখানে কাঁদানে গ্যাসের জেরে অসুস্থবোধ করছেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়। একটি মিছিল যায় জলপাইগুড়ির ফুলবাড়ি থেকে এবং অন্যটি যায় শিলিগুড়ির জলপাই মোড় থেকে। তবে পুলিশের সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের সংঘর্ষ তুঙ্গে ওঠে। সেই ধুন্ধুমার পরিবেশে চলে ইটবৃষ্টি, লাঠিচার্জ, জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস।
জলপাইগুড়ির মিছিলে নেতৃত্ব দেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। এছাড়া ছিলেন যুব মোর্চার সর্বভারতীয় সভাপতি তেজস্বী সূর্য, যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি সৌমিত্র খাঁ, রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু–সহ বিজেপি নেতাকর্মীরা। শিলিগুড়ির মিছিলে নেতৃত্ব দেন বিজেপির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। এমনকী ওই মিছিলে ছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ–সভাপতি মুকুল রায়, কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেনন।
দুপুরের দিকে ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যেতে থাকেন বিজেপি কর্মীরা। মিছিল আটকাতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো হয়। জলকামানও ব্যবহার করা হয়। পালটা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছুড়তে থাকেন বিজেপিকর্মীরা। ব্যারিকেডে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। বিজেপির দাবি, কর্মীদের উপর লাঠি চালানো হয়েছে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলন করা হয়েছে। অথচ পুলিশ বিজেপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে নির্মম ব্যবহার করেছে। কেন প্রত্যেকবার পুলিশ এরকম করবে? তাঁদের একাধিক নেতা অসুস্থবোধ করছেন। অনেকেরই অবস্থা ‘সংকটজনক’। মৃত্যু হয় উলেন রায় নামে এক বিজেপি কর্মীর। বিজেপির দাবি, পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে। তা নিয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে অভিযোগও জানায় বিজেপির প্রতিনিধিদল।
গুলি চালানোর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ। টুইটারে জানানো হয়েছে, ‘সংযম’ দেখিয়ে পুলিশ গুলি চালায়নি বা লাঠিচার্জ করেনি। বরং হিংসা চালিয়েছে ‘একটি রাজনৈতিক দল’। তবে একজনের মৃত্যুর খবর স্বীকার করে নিয়েছে পুলিশ। টুইটারে বলা হয়েছে, 'তবে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য দেহ পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।'
রাজনৈতিক মহলের মতে, বিধানসভা ভোটের আগে উত্তরবঙ্গে তৃণমূলের বিরুদ্ধে এই অভিযানকে হাতিয়ার করতে চাইছে বিজেপি। এই অভিযানের মাধ্যমে নিজেদের শক্তি যাচাই করতে নেমেছিল বিজেপি নেতৃত্ব। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গে ভালো ফল করেছিল বিজেপি। সংগঠনও সেখানে মজবুত রয়েছে দলের।
বিজেপি সূত্রে খবর, উত্তরবঙ্গের আটটি জেলা থেকে বিজেপি কর্মীরা এই অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। বিজেপি’র উত্তরকন্যা অভিযান নিয়ে আগাম সতর্কতা নিয়েছে প্রশাসন বলে তাদের দাবি। কিন্তু তার মধ্যে এই রণক্ষেত্রের চেহারা নিল কেন? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।