সালটা ২০২২। বীরভূমের বগটুই গ্রামে নারকীয় গণহত্যার ঘটনা ঘটেছিল। অগ্নিদগ্ধ হয়ে একের পর এক মানুষ মারা গিয়েছিলেন। সংখ্যাটা মুহূর্তে পৌঁছে যায় দশে। তীব্র আলোড়ন পড়ে রাজ্য–রাজনীতিতে। তৃণমূল কংগ্রেস নেতা ভাদু শেখ খুন হওয়ার পর এমনই ঘটনা ঘটেছিল। আর সেটাকে এনক্যাশ করতে স্বজনহারা পরিবারের সদস্যরা বিজেপিতে যোগ দেন। একেবারে নির্বাচনী লড়াইয়ে অংশ নেন। কিন্তু ফলাফলে লাভ হয়নি। তারপর তিন বছর কেটে যেতে বিজেপিতে মোহভঙ্গ হল স্বজনহারা মিহিলাল শেখের। তাই তো আজ বগটুই কাণ্ডের তিন বছরের মাথায় তৃণমূল কংগ্রেসের তৈরি শহিদ স্মরণ মঞ্চে গিয়ে নিজের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইলেন মিহিলাল শেখ। তারপর তাঁকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান এলাকার বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাতেই বগটুইতে নতুন সমীকরণ শুরু হল।
সেদিন রামপুরহাটের বড়শুল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তথা তৃণমূল কংগ্রেস নেতা ভাদু শেখকে বোমা মেরে খুন করা হয়। প্রতিশোধ নিতে বগটুই গ্রামে কয়েকজনকে ঘরবন্দি করে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। যে আগুনের লেলিহান শিখায় ঘুমের ঘোরে অগ্নিদগ্ধ হয়ে শিশু, মহিলাদের মৃত্যু হয়। মোট ১০ জনের মৃত্যুতে তখন বিরোধী দলগুলি ছুটে আসে। অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে বগটুই গ্রাম। রাজনৈতিক তরজায় কাঠগড়ায় তোলা হয় তৃণমূল কংগ্রেসকে। আর তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধিতা করে স্বজনহারা পরিবারের সদস্যরা বিজেপিতে যোগ দেন। ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে মিহিলাল শেখের আত্মীয়া সীমা খাতুন বিজেপির প্রার্থীও হন। কিন্তু পরাজিত হন।
আরও পড়ুন: ‘কাকে সাহায্য করছেন অফিসার?’ বেআইনি বাড়ি ভাঙা নিয়ে প্রশ্ন প্রধান বিচারপতির
বগটুইয়ের ঘটনায় রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে প্রথম বর্ষপূর্তিতে একই জায়গায় রাস্তার পরস্পর বিপরীতে শহিদ বেদি তৈরি করে বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেস। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ওই বেদি তৈরি করলেও আজ পর্যন্ত একদিনও পদ্ম শিবিরের কেউ মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানাননি। এমনই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। আজ শুক্রবার তৃতীয় বর্ষে শহিদ স্মরণসভার আয়োজন করে তৃণমূল কংগ্রেস। ওই বেদিতে মাল্যদান করেন রামপুরহাটের বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেরই মঞ্চেই দেখা গেল মিহিলাল শেখকে। হাত জোড় করে ক্ষমা চাইলেন এবং আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে বললেন, ‘তখন অনেক কটূ কথা বলেছিলাম। ভুল করেছিলাম। আজ আমি ক্ষমা চাইছি।’
এটাই আজ ছিল রাজ্য–রাজনীতির চরম ক্লাইম্যাক্স। ২০২৬ সালে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে মিহিলাল শেখ তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সখ্যতা বাড়ালেন। সুতরাং বিজেপি এখন অতীতের পথে। আজ, শুক্রবার মিহিলাল শেখের বক্তব্য, ‘শুভেন্দু অধিকারীরা প্রথম বছর আমাদের সঙ্গে ছিল। আর পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছিল। তারপর থেকে তাঁদের আর দেখা যায়নি। কারণ আমরা কিছুই জানি না। আমরাও আর বিজেপিতে নেই।’ এই কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মিহিলাল শেখকে কাছে টেনে নেন আশিসবাবু। তাঁকে নিজের বাড়িতে চা–চক্রে আমন্ত্রণ জানান। সুতরাং সব রাস্তা শেষে মিশল তৃণমূল কংগ্রেসে বলে মনে করা হচ্ছে।