বীরভূম জেলার বোলপুরের বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের জেরে মৃত্যু হয়েছে একই পরিবারের তিনজন সদস্যের। ঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। আর তার জেরেই পরিবারের তিন সদস্যের মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনায় ওই বাড়ির মেজ বউকে আজ, রবিবার গ্রেফতার করল পুলিশ। এমনকী তাঁর প্রেমিককেও আটক করে চলছে জিজ্ঞাসাবাদ বলে খবর। বাড়ির মেজ বউয়ের নাম নাজনি নাহার বিবি ওরফে স্মৃতি। তাঁকে গ্রেফতার করে রবিবার আদালতে তোলা হয়। বোলপুর মহকুমা আদালত ৭ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। এই ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত হাতুড়ে ডাক্তার শেখ সফিকুল ইসলাম ওরফে চন্দনকে আটক করে পুলিশ। চলছে দফায দফায় জিজ্ঞাসাবাদ।
এদিকে গত ৫ জুলাই রাতে বাড়িতে ঘুমোচ্ছিলেন বোলপুর থানার রায়পুর সুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের গীত গ্রামের বাসিন্দা শেখ তুতা, স্ত্রী রূপা বিবি এবং তাঁদের দুই সন্তান আয়ান শেখ ও শেখ রাখ। একই ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন সবাই। ওই ঘরের জানালা খোলা থাকায় সেখান দিয়ে কেরোসিন ছড়িয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ ওঠে। আগুনে পুড়ে প্রথমে মারা যান রূপা এবং তাঁর সন্তান। শনিবার বর্ধমানের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তুতাও। এই ঘটনা নিয়ে গোটা এলাকায় আলোড়ন পড়ে যায়। মৃত দম্পতির বড় ছেলে ওয়াসিম আখতার তাঁর কাকিমা নাজরিন নিহারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ওই বাড়ির মেজ বউকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
আরও পড়ুন: দু’দিন পরই চার বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন, কত কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকছে?
অন্যদিকে পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় এই ষড়যন্ত্রের কথা স্বীকার করেন মেজ বউ স্মৃতি। তখনই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রামের বাসিন্দা এক হাতুড়ে ডাক্তার চন্দন ইসলামের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল নাজরিন নিহারের। যার প্রতিবাদ করেছিলেন শেখ তুতা ও রূপা। আজ, রবিবার ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছেন ফরেনসিক বিভাগের অফিসাররা। টিমে আছেন ৬ জন অফিসার। ইতিমধ্যেই নমুনা সংগ্রহ করে তাঁরা খতিয়ে দেখছেন ঘটনাস্থল। ফরেনসিক টিমের সঙ্গে পুলিশও রয়েছে। গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনও তথ্য নাজরিন নিহার গোপন করছেন কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আজ রথযাত্রা দিনও এই ঘটনা নিয়ে জোর চর্চা চলছে।
এছাড়া রতন শেখের স্ত্রী নাজরিন নিহার ওরফে স্মৃতি বিবির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই অবৈধ সম্পর্ক ছিল পাশের গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তার শেখ সফিকুল ইসলামের। আর এই নিয়ে প্রায়ই পরিবারে চলত বিবাদ। হাতুড়ে ডাক্তারের বাড়ি সুপুর বানপাড়া এলাকায়। এই বিষয়ে মৃত দম্পতির বড় ছেলে ওয়াসিম আখতার বলেন, ‘আমার বাবা, মা বিষয়টি জানতে পেরে গিয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন। তাই চক্রান্ত করে আমার বাবা, মা ও ভাইকে মেরে ফেলা হয়েছে।’ শোকাহত পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা, বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ এবং বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ অসিত মাল। উপস্থিত হন বীরভূমের পুলিশ সুপার রাজনাথ মুখোপাধ্যায়ও।