বাংলাদেশের উত্তাল পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কি প্রতিবেশী এই রাষ্ট্র থেকে ভারতে অনুপ্রবেশ বাড়ছে? গত কয়েক দিন ধরেই সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে চর্চা চলছে। প্রশ্ন উঠছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের নিরাপত্তা নিয়ে।
বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলেছেন বিএসএফ-এর দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের আইজি মনীন্দর সিং পাওয়ার। তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সীমান্তে পাহারা আরও জোরদার করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করা হয়েছে। একইসঙ্গে, সীমান্ত যে বিএসএফ জওয়ানরা পাহারা দিচ্ছেন, তাঁদের নির্দিষ্টভাবে কিছু নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। কী সেগুলি?
বিএসএফ-এর দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের আইজি মনীন্দর সিং পাওয়ারকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমে যে সমস্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, সেই অনুসারে -
কাঁটাতারবিহীন অংশে নিরাপত্তায় বাড়তি গুরুত্ব:
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে এখনও এমন অনেক জায়গা রয়েছে, যেখানে কাঁটাতারের বেড়া নেই। সীমান্তের এই অংশগুলি নিয়েই এখন বেশি সতর্ক বিএসএফ। সামগ্রিকভাবে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হলেও সবথেকে বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে এই কাঁটাতারবিহীন এলাকাগুলিতেই।
সীমান্ত পাহারায় ভরসা আধুনিক প্রযুক্তি:
সীমান্ত পাহারা দিতে বিএসএফ জওয়ানরা নিয়মিত টহলদারি চালান। বাংলাদেশের উত্তাল পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে সেই টহলদারি আরও বাড়ানো হয়েছে। একইসঙ্গে, সীমান্ত পাহারায় বাড়ানো হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি ও অত্যাধুনিক নজরদারি ব্যবস্থাপনার ব্যবহার।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশ মেনে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এই ব্যবস্থাপনা ও সরঞ্জাম কাজে লাগানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিএসএফ-এর সংশ্লিষ্ট আধিকারিক। বিশেষ করে রাতের বেলা এই ধরনের প্রযুক্তি ও সরঞ্জামের উপর অধিক পরিমাণে গুরুত্ব দিচ্ছেন জওয়ানরা।
জওয়ানদের সচেতন থাকার নির্দেশ:
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সেদেশের কট্টরপন্থীরা ক্রমশ ভারত-বিরোধী আচরণ করছেন। ভারতের বিরুদ্ধে নানা ধরনের উস্কানিমূলক মন্তব্য করা হচ্ছে। এমনকী, সরাসরি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে পর্যন্ত নিশানা করা হচ্ছে! তথাকথিত 'বন্ধু রাষ্ট্রের' কাছ থেকে মিসাইল আনিয়ে সেই মিসাইল দিয়ে ভারতের উপর হামলা চালানোর মতো হাস্যকর হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
এই ধরনের উস্কানির ফলে যাতে সীমান্তে কোনও চরম পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সেই বিষয়ে জওয়ানদের সচেতনভাবে নজর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া কোনও পদক্ষেপ নয়:
এই ধরনের উস্কানির ফলে যদি কোনও প্ররোচনামূলক ঘটনা ঘটে, তাহলেও যাতে ভারতের বিএসএফ জওয়ানরা তাতে পা না দেন, সেই বিষয়ে বিশেষ করে তাঁদের সতর্ক করা হয়েছে।
জওয়ানদের বলা হয়েছে, তাঁদের সতর্ক এবং সচেতন থাকতে হবে। কিন্তু, শীর্ষ কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া কোনও রকম চরম পদক্ষেপ করা যাবে না। একইসঙ্গে, প্রত্যেকটি সীমান্তে মোতায়েন থাকা ব্যাটেলিয়নগুলিকেও বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
রাজ্য পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়:
ইতিমধ্য়েই রাজ্যে জাল পাসপোর্ট চক্রের পর্দাফাঁস করেছে পুলিশ। এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুসারে, অন্তত ২৫০ জন বাংলাদেশি ভারতে অনুপ্রবেশের পর জাল ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে এখানকার নাগরিকদের মাঝে মিশে গিয়েছেন!
এই ধরনের পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে মনে করছে বিএসএফ কর্তৃপক্ষ। তাই জাল পাসপোর্ট, বেনামে মোবাইলের সিম কেনার মতো ঘটনাগুলি সম্পর্কে অবহিত থাকতে সর্বদা রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে কাজ করছে তারা।