এদের বসবাস হিমাচল প্রদেশের চাম্বা উপত্যকায়। এটাই সকলের জানা। কিন্তু এখন সে এসে পড়েছে বক্সার জঙ্গলে। যা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। উত্তরবঙ্গে বেড়াতে এসে বক্সা টাইগার রিজার্ভে ছবি তুলতে গিয়ে ডানকুনির এক পর্যটকের ক্যামেরাবন্দি হয়ে যায় একটি লাঙ্গুর। অনেকেই প্রথম দেখায় মনে করেছিলেন, সাদা চুল–দাড়ি–গোঁফের একজন সাধু। কারণ সে শান্ত ছিল। কিন্তু পরে বিষয়টি স্পষ্ট হয় যে, এটা আসলে ‘হিমালয়ান গ্রে ল্যাঙ্গুর’। বিরল প্রজাতির প্রাণী। এই মূহূর্তে যা পৃথিবীতে আছে মাত্র দেড় হাজার। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই বাস্তব।
এদিকে বক্সার জঙ্গলে একটি গাছের মগডালে বসে থাকা প্রাণীটি হিমালয়ান গ্রে ল্যাঙ্গুর বোঝা যেতেই এখন সেখানে অনেকে যেতে চাইছেন। বন দফতর সতর্ক রয়েছে বিষয়টি ধরার জন্য। এদের বসবাস করতে সাধারণত দেখা যায় হিমাচলের চাম্বা, পাক অধিকৃত কাশ্মীর, উত্তর পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং নেপাল–ভুটানে। সেখানে বক্সার জঙ্গলে হিমালয়ান গ্রে ল্যাঙ্গুর বিশেষ প্রাপ্তি বলেই মনে করছেন অনেকে। গাছের মগডালে বসে চোখ পিটপিট করছিল হিমালয়ান গ্রে ল্যাঙ্গুর। দাঁত–মুখ খিঁচিয়ে তেড়ে আসেনি ওই ছবি তোলা পর্যটকের কাছে। এবার এই প্রজাতি দেখা গেল পশ্চিমবঙ্গে। তবে উত্তরবঙ্গের জঙ্গলে এই বিরল প্রাণীর দেখা মেলায় রাজ্য বন দফতর খুশি।
আরও পড়ুন: ‘ঢাকা দিয়ে খাবার বিক্রি করুন’, ফুরফুরা শরিফের পথে দোকানিকে পরামর্শ মুখ্যমন্ত্রীর
অন্যদিকে বন দফতরের নথি অনুযায়ী, ২০১৮ সালে বক্সা টাইগার রিজার্ভ ফরেস্টে প্রথমবার হিমালয়ান গ্রে লাঙ্গুরের দেখা মিলেছিল। আর এবার পর্যটকের ক্যামেরায় যা ধরা পড়েছে বন দফতর তা নিশ্চিত করেছে যে, এটি হিমালয়ান গ্রে লাঙ্গুর। এরা নিরীহ। তৃণভোজী বলেই জানা যায়। পোকামাকড় ধরে খায়। এই বিষয়ে বক্সার ফিল্ড ডিরেক্টর অপূর্ব সেনের কথায়, ‘আমরা জানতাম যে বক্সায় হিমালয়ান গ্রে ল্যাঙ্গুরের বসতি রয়েছে। এতদিন সেটা প্রকাশ্যে আসেনি। তবে ওই বিশেষ প্রজাতির লাঙ্গুরের সংখ্যা নিয়ে আমাদের কাছে কোনও নথি নেই। ভবিষ্যতে এই নিয়ে শুমারি করার কথা ভাবা যেতে পারে।’
এছাড়া বনদফতর সূত্রে খবর, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচারের তালিকায় হিমালয়ান গ্রে ল্যাঙ্গুর অত্যন্ত বিরল প্রাণী। হিমাচল প্রদেশ এবং জম্মু ও কাশ্মীর ছাড়া আর তাদের দেখা মেলে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভূটান ও নেপালে। হিমালয়ান গ্রে ল্যাঙ্গুরের বাহু এবং উরুর রং গাঢ় ধূসর। পাতা ছাড়া ফল, ফুলের পাপড়ি, কুঁড়ি, কাণ্ড, বাকল, শিকড় এবং পোকামাকড় খায়। সমুদ্রস্পৃষ্ট থেকে কয়েক হাজার উচ্চতায় উপ ক্রান্তীয়, গ্রীষ্ম, আর্দ্র এবং পাতাযুক্ত বনে বসবাস করে হিমালয়ান গ্রে ল্যাঙ্গুর। বক্সার আবহাওয়া অনেক বেশি আর্দ্র। সেটার সঙ্গে নেপালের আবহাওয়ার মিল অনেক বেশি বলেই এখানে এসেছে হিমালয়ান গ্রে ল্যাঙ্গুর বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।