রাত পোহালেই বাংলার ৬টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন হবে। এতদিন প্রচার থেকে মনোনয়ন সব ক্ষেত্রের কাজ হয়েছে। তবে এই উপনির্বাচনগুলি এবার স্থানীয় বিষয় ও সংগঠনের জোরের উপর হতে চলেছে। উপনির্বাচন হবে হাড়োয়া বিধানসভা কেন্দ্রে। তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক হাজি নুরুল ইসলাম লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় শূন্য হয়েছিল হাড়োয়া কেন্দ্রটি। হাজি নুরুল লোকসভা নির্বাচনে জিতে সাংসদ হয়েছিলেন। কিছুদিন আগে তাঁর মৃত্যু হয়। হাড়োয়া কেন্দ্রে চতুর্মুখী লড়াই। রাজ্য সরকারের সামাজিক প্রকল্পের সুবিধাগুলি নিয়ে মানুষের দুয়ারে প্রচার করছেন কর্মীরা। সংখ্যালঘু এবং মহিলা ভোটারদের ভোটে জয়ের ব্যবধান বাড়াতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস। তবে লড়াইয়ের ময়দানে দেখা যাচ্ছে না আইএসএফ ও কংগ্রেসকে।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের জয়ের এসেছিল ৮০৯৭৮। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের জয়ের মার্জিন ছিল ৩৩৩৫৪৭। সুতরাং এখানে শাসকদলের সংগঠন অত্যন্ত শক্তিশালী। ভরা সন্দেশখালি ইস্যুকে সামনে রেখে বিজেপি বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্র জিততে পারেনি। এবার এখানে তেমন কোনও ইস্যু নেই বিরোধীদের হাতে। আরজি কর হাসপাতাল কাণ্ডের ইস্যু এখানে সেভাবে বিস্তার করেনি। ফলে প্রভাব পড়বে না হাড়োয়া বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে। সুন্দরবনের গা ঘেঁষা গ্রামীণ এই এলাকা নদীবেষ্টিত। ১৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত আছে হাড়োয়া বিধানসভা কেন্দ্রের অধীনে।
এই বিধানসভা কেন্দ্রে প্রচার করে গিয়েছেন ফিরহাদ হাকিম, সুজিত বসু, রথীন ঘোষ, পার্থ ভৌমিক–সহ একঝাঁক মন্ত্রী ও সাংসদরা। ২০১৬ ও ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে হাড়োয়া থেকে বিধায়ক ছিলেন হাজি নুরুল ইসলাম। গত লোকসভায় হাড়োয়া বিধানসভায় তাঁর জয়ের ব্যবধান ছিল ১ লক্ষ ১১ হাজার ১২১ ভোট। এবার জয়ের মার্জিন আরও বাড়ানোই লক্ষ্য তৃণমূল কংগ্রেসের। এখানে ভোটার সংখ্যা ২ লক্ষ ৬৯ হাজার ১০৩। এখানে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী হাজি নুরুলের পুত্র রবিউল ইসলাম। সিপিএম তথা বামেরা আইএসএফ প্রার্থীকে সমর্থন করেছেন। কংগ্রেসের প্রার্থীর নাম হাবিব রেজা চৌধুরী। আর বিজেপির টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিমল দাস। এখানে আইএসএফ প্রার্থী পিয়ারুল ইসলাম গাজি।
আরও পড়ুন: কিং মেকারের উপরই মেদিনীপুরে ভরসা করছে তৃণমূল কংগ্রেস, বিরোধীরা কতটা এগিয়ে?
তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী রবিউল ইসলামকে নিয়ে দলের অন্দরে ক্ষোভ আছে। আর বারাসত–২ ব্লকে ক্ষোভ বেশি রয়েছে। কিন্তু বিরোধীদের এখানে তেমন উপস্থিতি না থাকায় এগিয়ে রয়েছেন রবিউল ইসলাম। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তৃণমূল কংগ্রেসেই ছিলেন হাবিব রেজা চৌধুরী। তাঁর দাদা হুমায়ুন রেজা চৌধুরী দেগঙ্গা চাঁপাতলা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান। দুই ভাইয়ের রাজনৈতিক মতবিরোধ আছে। তাই তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়েছিলেন হাবিব। এবার তিনি কংগ্রেসের প্রার্থী। আবার বিজেপির প্রার্থী বিমল দাসকে নিয়ে বিজেপির অন্দরে ক্ষোভ আছে। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি এখানে তৃতীয় স্থানে ছিল। কিন্ত ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে আইএসএফ প্রার্থী দ্বিতীয় স্থানে, বিজেপি তৃতীয় স্থানে এবং সিপিএম চতুর্থ স্থানে ছিল।
১৩টি পঞ্চায়েত নিয়ে হাড়োয়া বিধানসভা কেন্দ্র। তার মধ্যে পাঁচটি পঞ্চায়েত বারাসত–২ ব্লকে আর চারটি দেগঙ্গা ব্লকে। বাকি চারটি রয়েছে হাড়োয়ায়। মোট ভোটারের মধ্যে ৭১ শতাংশ সংখ্যালঘু। রাজ্য সরকারের চালু করা কর্মশ্রী প্রকল্পে ১০০ দিনের কাজের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতি ভাল জায়গায় আছে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো সামাজিক প্রকল্পের দৌলতে আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব। তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাবা উন্নয়নের নানা কাজ করেছেন। প্রচারে বেরিয়ে দারুণ সাড়া পাচ্ছি।’ বিজেপি প্রার্থী বিমল দাসের বক্তব্য, ‘উপনির্বাচনে কারচুপি, সন্ত্রাস করতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস।’