রাত পোহালেই বাংলার ৬টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন হবে। এতদিন প্রচার থেকে মনোনয়ন সব ক্ষেত্রের কাজ হয়েছে। তবে এই উপনির্বাচনগুলি এবার স্থানীয় বিষয় ও সংগঠনের জোরের উপর হতে চলেছে। উপনির্বাচন হবে নৈহাটি বিধানসভা কেন্দ্রে। নৈহাটি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে পার্থ ভৌমিক গত বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে মন্ত্রী হন। ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিংকে হারিয়ে পার্থ সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। তাই নৈহাটি বিধানসভা উপনির্বাচন হচ্ছে। পার্থ ভৌমিকের ছেড়ে যাওয়া আসনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী করেছে নৈহাটি পুরসভার দু’বারের চেয়ারম্যান পারিষদ সনৎ দে’কে। একদা বামেদের দুর্ভেদ্য ঘাঁটি নৈহাটি উপনির্বাচনে সিপিএম কোনও প্রার্থী দেয়নি। তারা আসনটি সিপিআই (এমএল) লিবারেশনকে ছেড়ে দিয়েছে। বিজেপি ও কংগ্রেস এখানে আলাদা করে প্রার্থী দিয়েছে।
এখানে সিপিআই (এমএল) লিবারেশন দেবজ্যোতি মজুমদারকে প্রার্থী করেছে। কংগ্রেস প্রার্থী করেছে পরেশনাথ সরকারকে এবং বিজেপির প্রার্থী রূপক মিত্র। বিরোধীদের এখানে পিছনে ফেলে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতিধন্য মাটিতে তৃণমূল কংগ্রেস ব্যাপক প্রচার করেছে। নির্বাচনী পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী পার্থ ভৌমিক ১৮ হাজারের বেশি ভোটে জয়লাভ করেছিলেন। লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের লিড ছিল ১৫ হাজারেরও বেশি। এখানে বিরোধীদের প্রচার করতে দেখা গেলেও তেমন সাড়া মেলেনি। বিজেপি যদিও একটু সাড়া পেয়েছে, কংগ্রেস আর লিবারেশন তেমন কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি নৈহাটি বিধানসভা কেন্দ্রে।
বামফ্রন্ট সরকারের জমানায় তৎকালীন পরিবহণমন্ত্রী রঞ্জিত কুণ্ডুর গড় ছিল এই নৈহাটি বিধানসভা কেন্দ্র। ২০১১ সালের পর বিধায়ক থেকে সাংসদ হওয়া পার্থ ভৌমিকের দুর্গ হয়ে উঠেছে নৈহাটি। সেখানে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি এবং বাম সমর্থিত সিপিআই (এমএল) লিবারেশন বা কংগ্রেস কতটা ফসল ঘরে তুলতে পারবে তা নিয়ে সন্দিহান সবপক্ষই। এই আবহ দেখেই পার্থ ভৌমিক বলছেন, ‘জয়ের ব্যবধান ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যাওয়াই আমাদের লক্ষ্য।’ তবে এখানে আরজি কর হাসপাতালে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রভাব কিন্তু আছে। সেটাকে বিরোধীরা কতটা তুলে ধরতে পারে তার উপরই নির্ভর করছে তৃণমূল কংগ্রেসের ভোটে থাবা বসানো।
আরও পড়ুন: হাড়োয়া বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বাবাকেই সামনে রাখছে ছেলে, বিরোধীদের দেখা নেই
এখানে উপনির্বাচনে শাসক–বিরোধী সবপক্ষই ভাল প্রচার করেছে। তবে গমতন্ত্রে শেষ কথা বলে আমজনতা। যদিও এখানে তৃণমূল কংগ্রেসের সংগঠন অত্যন্ত শক্তিশালী। এই এলাকার রায়পাড়ার মুদির দোকানের মহিলার বক্তব্য, ‘উপনির্বাচন তো বরাবর শাসকের পক্ষেই যায়। সুতরাং উল্টোদিকে প্রার্থী ভাল হলেও খুব কিছু লাভ হয় না।’ এখানের গৌরীপুর জুটমিল বন্ধ বহু বছর। এটাকেই হাতিয়ার করেছেন লিবারেশনের প্রার্থী দেবজ্যোতি মজুমদার। লিবারেশন প্রার্থী দেবজ্যোতি মজুমদারের কথায়, ‘আমরা লড়াইয়ে নেমেছি। আরজি কর হাসপাতালের ঘটনায় গত ১৩ বছরের জমা হওয়া ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখিয়েছে মানুষ। নৈহাটিতে নাগরিক মিছিলে হামলা চালানো হয়েছে। এসব মানুষ মানবে না।’
গঙ্গাপাড়ের এই শহরতলি নৈহাটিতে জয়ের বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেস অনেকটা আশাবাদী হয়ে উঠেছে। তবে বিরোধীরাও বিনাযুদ্ধে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ। বিজেপি প্রার্থী রূপক মিত্রের বক্তব্য, ‘মানুষ যদি ভোট দিতে পারে সেক্ষেত্রে খেলা ঘুরবে।’ বিরোধীরা আরজি কর হাসপাতালের ঘটনাকেই মূল ফোকাস করলেও তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী সনৎ দে মনে করিয়ে দিচ্ছেন করোনাভাইরাসের সময়ের কথা। যখন তিনি উদ্যোগ নিয়ে বহু মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন। তাই আত্মবিশ্বাসী সনৎ দে’ দাবি, ‘অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করা এবং নৈহাটি হাসপাতালের পরিকাঠামোর উন্নয়ন আমার প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য।’