রাত পোহালেই বাংলার ৬টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন হবে। এতদিন প্রচার থেকে মনোনয়ন সব ক্ষেত্রের কাজ হয়েছে। তবে এই উপনির্বাচনগুলি এবার স্থানীয় বিষয় ও সংগঠনের জোরের উপর হতে চলেছে। উপনির্বাচন হবে তালড্যাংরা বিধানসভা কেন্দ্রে। এই তালড্যাংরায় এবার চতুর্মুখী লড়াই। কারণ বাম–কংগ্রেসের জোট হয়নি। এখানে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী ফাল্গুনী সিংহবাবু। বিজেপি প্রার্থী করেছে অনন্যা রায় চক্রবর্তীকে এবং কংগ্রেসের প্রার্থীর নাম তুষারকান্তি সন্নিগ্রাহী ও সিপিএম এখানে প্রার্থী করেছে দেবকান্তি মোহান্তিকে। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বাঁকুড়ার তালড্যাংরায় ছিল ত্রিমুখী লড়াই। তখন তিনজন প্রার্থীই ছিলেন বাঙালি। তবে এবারের উপনির্বাচনে তিনজন প্রার্থীই উৎকল ব্রাহ্মণ সমাজভুক্ত।
রাত পোহালেই তাই টানটান লড়াই হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস এবং সিপিএম প্রার্থীদের শিকড় ওড়িশায়। যদিও তাঁরা বাঙালি। তবে অনন্যা রায় চক্রবর্তী বাঁকুড়া শহরের বাসিন্দা। আগে তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় নেত্রী ছিলেন। তার পর বিজেপিতে যোগ দেন। এই আবহে কদিন আগে ২০ জন বিজেপি থেকে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন। ইন্দপুরের ঝরিয়া গ্রামে স্থানীয় ইন্দপুর মণ্ডল–২ যুব মোর্চার প্রাক্তন সভাপতি রাজীব পাল–সহ ২০ জন ফুল বদল করেন। তার পর এই উপনির্বাচন বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
বাংলায় উৎকল ব্রাহ্মণদের দেখা যায় প্রায় ৮০০ বছর আগে। তখন ছিল সুলতানি আমল। এখনকার বাঙালিদের বাঙালি হয়ে ওঠার অনেক আগে থেকে এখানে তাঁদের বসবাস। সে যাইহোক একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বাঁকুড়ার তালড্যাংরা আসন থেকে জিতেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের অরূপ চক্রবর্তী। তাঁর প্রতিপক্ষ ছিলেন সিপিএমের মনোরঞ্জন পাত্র এবং বিজেপির শ্যামল কুমার সরকার। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাঁকুড়া থেকে তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন। তাই বুধবার তালডাংরায় উপনির্বাচন হচ্ছে। এবার এই কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখ ফাল্গুনী সিংহবাবু।
আরও পড়ুন: শাসক–বিরোধীর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখবে নৈহাটি, এক ইঞ্চি জমি ছাড়ছে না কেউ
এই বিধানসভা কেন্দ্রের বিষয়টি হল—তালড্যাংরা বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটার ২ লক্ষ ৬৪ হাজার। তার মধ্যে ১ লক্ষ ৩০ হাজার ভোটার উৎকল সমাজভুক্ত। যাঁরা সিমলাপাল ব্লকে বসবাস করেন। ২০১৯ সাল থেকে বামেদের ভোট চলে যাচ্ছে রামেদের কাছে। এবার তা হবে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। তাই ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে জেতেন ডা. সুভাষ সরকার। যদিও আসনটি ধরে রাখতে পারেননি। ২০২৪ সালে তা চলে যায় তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে। সাংসদ হন দক্ষ সংগঠক অরূপ চক্রবর্তী। এবারের উপনির্বাচনে তিনিই নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মনে রাখতে হবে, তালড্যাংরা বিধানসভা কেন্দ্রে ‘লিড’ পায় তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু উৎকল ব্রাহ্মণ সমাজের ভোট পায়নি। সেটা বিজেপির কাছেই গিয়েছে। বিধায়ক পদপ্রার্থী ফাল্গুনি সিংহবাবুর বক্তব্য, ‘বিজেপিতে আর কেউ থাকবে না। বিজেপি দলটাই বাংলা থেকে বিদায় নেবে।’ সিপিএম নেতা অমিয় পাত্র বলছেন, ‘আমরা কোনও জাতিগত পরিচিতির ভিত্তিতে প্রার্থী করিনি। আমাদের প্রার্থী পেশায় শিক্ষক এবং সমাজে তাঁর পরিচিতি আছে।’
এই আসনে ১৯৬৯ সালে সিপিএমের মোহিনীমোহন পন্ডা জিতেছিলেন। ১৯৭১ সালে জেতেন মোহিনীমোহন পন্ডা। তবে ১৯৭২ সালে মোহিনীমোহনকে হারিয়ে দেন কংগ্রেসের উৎকল সমাজের নেতা ফণীভূষণ সন্নিগ্রাহী। ১৯৭৭ এবং ১৯৮২ সালের নির্বাচনে জেতেন মোহিনীমোহন। আর ১৯৮৭ সালে ঘটে উলটপরাণ। সিপিএমের হয়ে তখন থেকে জিততে থাকেন অমিয় পাত্র, মনোরঞ্জন পাত্ররা। তবে সেটাও চিরস্থায়ী হয়নি। ২০১৬ সালে এই কেন্দ্রে জেতেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী সমীর চক্রবর্তী। ২০২১ সালে জিতে বিধায়ক হন অরূপ চক্রবর্তী।