রাত পোহালেই বাংলার ৬টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন হবে। এতদিন প্রচার থেকে মনোনয়ন সব ক্ষেত্রের কাজ হয়েছে। তবে এই উপনির্বাচনগুলি এবার স্থানীয় বিষয় ও সংগঠনের জোরের উপর হতে চলেছে। উপনির্বাচন হবে মেদিনীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে। যেখানে অতীতে জনপ্রিয় কংগ্রেস নেতা জ্ঞানসিং সোহন পালকে হারিয়ে জিতেছিলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। বিধায়ক হওয়ার পর এখান থেকে সাংসদ হয়েছিলেন দিলীপ ঘোষ। এখন সেটা অতীত। এখন এই কেন্দ্র থেকে সাংসদ হয়েছেন জুন মালিয়া। যিনি এখানের বিধায়ক ছিলেন। এখানের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সুজয় হাজরা। যিনি পাঁচবারের ভোট ম্যানেজার। প্রয়াত বিধায়ক মৃগেন্দ্রনাথ মাইতির ছায়াসঙ্গীও ছিলেন। তাই হাতের তালুর মতো চেনেন মেদিনীপুর বিধানসভার শহর, গ্রাম, পথঘাট এবং অলিগলি। দল তাঁকে যতগুলি নির্বাচনের দায়িত্ব দিয়েছিলেন সব কটিতেই বিরোধীদের গোল দিয়েছেন। এবার সুজয় হাজরাই লড়াইয়ের ময়দানে।
এবারের উপনির্বাচনে বাজিমাত করবে কে? এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এখানে বড় শরিক সিপিএম প্রার্থী দেয়নি। আসনটি মেজ শরিক সিপিআই–কে ছেড়ে দিয়েছে। তাই তাঁদের প্রার্থী মণিকুন্তল খামরাই। কংগ্রেস এখানে শ্যামল কুমার ঘোষকে প্রার্থী করেছে। আর বিজেপি শুভজিৎ রায়কে প্রার্থী করেছে। মেদিনীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে রয়েছে ২৫টি ওয়ার্ড। মেদিনীপুর সদর ব্লকের ৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং শালবনি ব্লকের ৫টা গ্রাম পঞ্চায়েত। মোট ভোটার ২ লক্ষ ৯১ হাজার। মেদিনীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সিপিআই প্রার্থী জিতেছেন। শেষবার এখানে জিতেছিলেন সিপিআই প্রার্থী পূর্ণেন্দু সেনগুপ্ত। তারপর ২০১১ এবং ২০১৬ সালে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মৃগেন মাইতি জয়ী হয়েছিলেন। তিনি প্রয়াত হওয়ার পর এই কেন্দ্রের বিধায়ক হন জুন মালিয়া। এবার জেলা সভাপতি তথা ক্রীড়া সংগঠক সুজয় হাজরা।
আরও পড়ুন: উপনির্বাচনের প্রাক্কালে কাজল শেখের নিরাপত্তা বাড়ল, ‘ওয়াই প্লাস’ ক্যাটিগরি সুরক্ষা জুটছে
এই কেন্দ্রে জয় একশো শতাংশ হলেও জোরদার লড়াইয়ে নেমেছে তৃণমূল কংগ্রেস। নিজের পুরনো স্কুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন সুজয় হাজরা। প্রত্যেক মানুষের দুয়ারে গিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী। মাথায় সাদা টুপি, পাজামা–পাঞ্জাবি আর পায়ে চটি।। সুজয় হাজরার ভোট প্রচারে দেখা গিয়েছে প্রবীণ রাজনীতিবিদ, মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান এবং খড়্গপুরের (গ্রামীণ) বিধায়ক দীনেন রায়কে। এই উপনির্বাচনে চতুর্মুখী লড়াই হবে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর কেন্দ্র থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে প্রায় ২৪ হাজার ভোটে জিতেছিলেন অভিনেত্রী জুন মালিয়া। এখন এখান থেকে তিনি সাংসদ। তবে মেদিনীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের জয়ের ব্যবধান কমে দাঁড়ায় ২২০০। লোকসভায় নির্বাচনের ব্যবধান কমেছে। যদিও আশাবাদী ঘাসফুল শিবির।
এখানের প্রার্থী সুজয় হাজরা পরিচিত মুখ। দক্ষ সংগঠক। সারা বছর মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। সাদামাটা জীবনযাপন। তবে সুজয় হাজরা বরাবর সাংসদ জুন মালিয়ার বিরোধী গোষ্ঠী। সেক্ষেত্রে একটা গোষ্ঠীকোন্দল কাঁটা আছে। সুজয় হাজরা বলেন, ‘দল আমাকে প্রার্থী করেছে। আমি কৃতজ্ঞ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের উন্নয়ন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বলিষ্ঠ নেতৃত্বকে মানুষ আশীর্বাদ করছেন। প্রচারে মানুষের উচ্ছ্বাসই তার প্রমাণ। কিছু সমস্যা আছে। সেগুলি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সুফল পাচ্ছেন প্রত্যেকটি মানুষ। ১৩ নভেম্বর তাঁরাই ভোট দেবেন।’ বিজেপি প্রার্থী এখানে আইনজীবী শুভজিৎ রায়। শুভজিৎ মেদিনীপুরের বাসিন্দা। ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে এসেছেন এই বিজেপি নেতা। তাঁর কথায়, ‘প্রচারে মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। মানুষ ভোট দিতে পারলে তৃণমূল গোহারা হারবে।’ আর লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে মেদিনীপুর পুরসভা এলাকায় বিজেপি এগিয়ে ছিল। তবে এখানে আরজি কর হাসপাতালের ঘটনা প্রভাব ফেলেনি।