১২ বছরের এক নাবালিকার ২৮ সপ্তাহে গর্ভপাত করানো নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ রায় দিল কলকাতা হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ। গর্ভপাতে না করে দিয়ে সন্তান প্রসবের পক্ষে রায় দিয়েছে আদালত। তবে আদালত তার রায়ে এও বলেছে, সন্তানকে নিয়ে নাবালিকা মাকে যাতে কোনও সমস্যায় পড়তে না হয় তা দেখতে হবে রাষ্ট্র।
গর্ভাবস্থার ২৮ সপ্তাহে এক নাবালিকার গর্ভপাতের জন্য কলকাতা হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চে আবেদন করেছিলেন তাঁর মা। মা অভিযোগ করেন, ওই নাবালিকার উপর যৌন নির্যাতন চালানো হয়েছিল। তাই সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। মার্চে উত্তরবঙ্গের এক থানায় অভিযোগও দায়ের করেন তার মা।
বর্তমানে রাজ্যের একটি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই নবালিকার শরীরিক পরীক্ষার জন্য একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। বোর্ডের রিপোর্টে বলা হয়, নাবালিকার গর্ভে দুটি ভ্রুণ রয়েছে। কিন্তু আদালতের নির্দেশ না থাকায় হাসপাতাল গর্ভপাতে রাজি হয়নি। এর পর আদালতের দ্বারস্থ হন তার মা।
আদালত নির্দেশ দেয়, হাসপাতালের জোনাল মেডিক্যাল বোর্ডের চেয়ারম্যান নাবালিকার শারীরিক অবস্থার পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা করবেন এবং একদিনের মধ্যে আদালতকে সেই রিপোর্ট দেবেন। গর্ভপাত করালে নাবালিকার শরীরে কোনও প্রভাব পড়বে কি না তা জানাতে বলা হয়েছিল মেডিক্যাল বোর্ডকে।
বোর্ড বলে, নাবালিকা ২৮ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা। যমজ ভ্রুণ দু'টির কোনও জন্মগত বিকৃতি নেই। ১২ বছর বয়সে গর্ভবতী হয়ে পড়া ছাড়া আর কোনও গর্ভাবস্থা সংক্রান্ত জটিলতাও নেই। এই অবস্থায় তাঁর যদি গর্ভপাত করানো হয়, তবে ব্যাপক রক্তক্ষণ ও সংক্রমণের ঝুঁকি থাকতে পারে। এমন কী গর্ভবতী মায়ের মৃত্যুও হতে পারে। সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে ঝুঁকি কম বলেই জানিয়ে ছিল মেডিক্যাল বোর্ড। তবে আদালতের অনুমতি স্বাপেক্ষে গর্ভপাতের ঝুঁকি নেওয়া যেতে পারে।
মেডিক্যাল বোর্ডের এই বক্তব্য শুনে সার্কিট বেঞ্চের বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু বলেন, সম্মানের সঙ্গে, মর্যাদার সঙ্গে বাঁচার অধিকার সবার রয়েছে। সেই অধিকার রক্ষা করে গিয়ে যদি প্রাণ না থাকে, তাহলে? গর্ভপাত করানোর অনুমতির আবেদন খারিজ করে দেন বিচারপতি।
বিচারপতি পর্যবেক্ষণ, সংবিধান অনুযায়ী নাবালিকার সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। কিন্তু যমজ সন্তান হলে অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণের ক্ষত সারাজীবন বইতে হবে। এতে নাবালিকার মানসিক স্বাস্থের ক্ষতি হতে পারে।
শুধু ওই নাবালিকার পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। বাবা বছর খানেক আগে তাদের ছেড়ে চলে গিয়েছে। বিউটি পার্লারে কাজ করে মা ভাই ও তাকে মানুষ করেছে। এই টানাটানির সংসারে সে দুই সদ্যোজাতকে মানুষ করবে কী ভাবে।
সার্কিট বেঞ্চ জানিয়েছে, এর দায় রাষ্ট্রের। জুভেনাইল জাস্টিস আইন অনুযায়ী ওই দুই শিশুর দত্তকের জন্য জেলাশাসকের কাছে আবেদন জানাতে পারে ওই নাবালিকা। সেক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী শিশুদের দায়িত্ব নেবে প্রশাসন।