উদীয়মান নৃত্যশিল্পী ছিলেন সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়। যাঁর অকাল মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে চন্দননগরের নারুয়া রায়পাড়ায়। রবিবার বেশি রাতে একটি অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় সুতন্দ্রার। এই মৃত্যু নিয়ে বিতর্ক আছে। কারণ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের এই যুবতীর সঙ্গীরা ইভটিজিংয়ের তত্ত্ব সামনে নিয়ে আসেন। আর ইভটিজিংয়ের জন্যই সুতন্দ্রার গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে এবং তিনি মারা যান বলে তাঁদের দাবি। যদিও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে এনে জানিয়ে দিয়েছে, ইভটিজিংয়ের কোনও ঘটনাই ঘটেনি। রেষারেষি করার জেরেই এই পথ দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এসব বিতর্ক বোঝে না অবলা সারমেয়রা। যারা সুতন্দ্রার জন্য বাড়ির সামনে অপেক্ষা করছিল।
এই পথকুকুরদের রোজ খেতে দিতেন সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়। বাড়িতে তাঁকে সকলে ‘মাম’ বলে ডাকতেন। আজ তো আর মাম দিদি নেই। কে খেতে দেবে তাদের। বাড়ির সামনে এসে ভিড় করেছিল সারমেয়রা। একটু ডাকাডাকিও করেছিল। কিন্তু মাম দিদির সাড়া না পেয়ে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তারা। বাড়ি থেকে কেউ বেরিয়ে আসেনি। তাই মন ভার করেই ধীরে ধীরে সে পথ ত্যাগ করে পথকুকুররা। আসলে এটাই ভালবাসা। খাবার একটা বিষয় বটেই। তবু তো কেউ তাদের দেখভাল করত। এখন কী হবে? এই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সারমেয়দের মধ্যে। তাই তো মুখ উঁচু করে বাড়ির দিকে তাকিয়ে ছিল। বাড়ির আশেপাশে ঘুরল। তবু কিছু জানতে পারেনি। তাই কিছুদূরে গিয়ে পথ চেয়ে বসে রইল পথকুকুররা।
আরও পড়ুন: লালবাজারের নয়া গোয়েন্দা শাখা এবার ভাঙড়ে, বিধানসভা নির্বাচনের আগে বড় পদক্ষেপ
আর রাতেই পথ দুর্ঘটনার খবর পেয়ে থানায় পৌঁছে যান মা তনুশ্রী চট্টোপাধ্যায়। তাঁর জীবনেও কষ্টের শেষ নেই। আট মাস আগে স্বামীকে হারিয়েছেন। এখন বছর ঘোরার আগেই মেয়েকে হারালেন। শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন তিনি। তাই বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না। বাড়িতে ঠাকুমা রয়েছেন। যিনি সুতন্দ্রাকে আদর করে নাম দিয়েছিলেন ‘মাম’। আর তনুশ্রী দেবী তো বিধবা মা। মেয়ের দিকে তাকিয়েই বেঁচে ছিলেন। এখন সেই বেঁচে থাকার সাহারাটুকুও চলে গিয়েছে। সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়ের বাবা সুকান্ত চট্টোপাধ্যায় রেলের ঠিকাদার ছিলেন। তবে গান–বাজনা করতেন। বাড়িতে সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল ছিল। তার মধ্যেই বড় হয়ে ওঠে সুতন্দ্রা। নাচের প্রতি ভালবাসা ছিল ছোট থেকেই। তাই তো স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে নাচের পেশাদারি তালিম নেন সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়।
এই নাচের অনুষ্ঠান করতে গিয়েই পথ দুর্ঘটনায় মারা গেলেন সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায় ওরফে মাম। চন্দননগরের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন। আর তা শেষ করে শ্রীরামপুর কলেজ থেকে স্নাতক হন সুতন্দ্রা। তখন থেকেই বারোয়ারি দুর্গাপুজোর মণ্ডপে পাড়ার ছোটদের নিয়ে নাচের অনুষ্ঠানও করতেন। সুতন্দ্রার নাচের দলের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৪০ জন। নানা অনুষ্ঠানে তাঁরা গিয়ে নাচ দেখাতেন। এই নাচের দলের শিল্পীদের আশ্রয়ের জন্য গয়ায় ফ্ল্যাটও ভাড়ায় নিয়েছিলেন সুতন্দ্রা। সেখানে যেতেই গিয়েই সব শেষ হয়ে গেল। সুতন্দ্রার এক সহ–শিল্পী বিশ্বজিৎ রায় বলেন, ‘আমি ছোট থেকেই ওকে দেখেছি। আমরা একসঙ্গে বহু জায়গায় অনেক নাচের অনুষ্ঠান করেছি। খুবই ভাল মনের মেয়ে ছিল। পাড়ার কুকুরদের যত্ন করত ও তাদের খেতে দিত। এক নিমেষে সবকিছু শেষ হয়ে গেল।’