যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে। এই প্রবাদ বাক্যের প্রমাণ দিলেন স্বয়ং পুরপ্রশাসক। রাতে ফোন করেও পাওয়া যায়নি চালককে। তাই হাসপাতাল থেকে এক মহিলার মৃতদেহ বাড়িতে পৌঁছে দিতে শববাহী গাড়ির চালকের আসনে বসে পড়লেন পুরপ্রশাসক। প্রায় ৩০ কিলোমিটার রাস্তা স্বচ্ছন্দে গাড়ি চালিয়ে শেষকৃত্যের জন্য পৌঁছে দিলেন দেহ। আর সঙ্গে সঙ্গে উদাহরণ রাখলেন ‘মানবিকতার’।
ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার সকালে চন্দ্রকোনা পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের খেজুরডাঙা এলাকায়। যা দেখে অবাক সকলেই। এখানের বাসিন্দা ৫৫ বছরের লক্ষ্মী দলুই নামে এক মহিলা আক্রান্ত হন হৃদরোগে। তাঁকে নিজে উদ্যোগ নিয়েই ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভরতি করেন চন্দ্রকোনা পুরসভার প্রশাসক অরূপ ধাড়া। তিনি তৃণমূল পরিচালিত ওই পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যানও বটে। বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে এই ঘটনা এলাকার মানুষের মনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে মত স্থানীয়দের।
যদিও শেষরক্ষা করা যায়নি। কারণ শুক্রবার গভীর রাতে মৃত্যু হয় লক্ষ্মীর। রাতেই দেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য পুরসভার শববাহী গাড়িচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে মৃতার পরিবার। কিন্তু তাঁকে পাওয়া যায়নি। এই ঘটনা তাঁরা অরূপবাবুকে ফোন করে জানান। কিন্তু গাড়িচালকের সঙ্গে কোনওভাবে যোগাযোগ করতে পারেননি তিনিও। তাই উপায় না দেখে রাত ১২ টার পর শেষমেশ ময়দানে নামে অরূপ নিজেই। পুরসভা থেকে শববাহী গাড়ি বের করে চালকের আসনে বসে পড়েন নিজেই। গাড়ি নিয়ে পৌঁছে যান হাসপাতালে। প্রায় ৫০ কিলোমিটার রাস্তা গাড়ি চালিয়ে মহিলার দেহ তিনি পৌঁছে দেন বাড়িতে। যেন নিজের নিকট আত্মীয়। এভাবেই নীরবে নিভৃতে কাজ করে গেলেন তিনি।
উল্লেখ্য, মায়ের মৃত্যুর বিষাদ গ্রাস করেছে লক্ষ্মীর ছেলে মহাদেব দলুইকে। কিন্তু অরূপের এমন সাহায্যে একইসঙ্গে তিনি বিস্মিতও। তিনি বলেন, ‘গভীর রাতে শববাহী গাড়িচালককে ফোনে না পেয়ে অরুপবাবুকে সব কথা বলি। তিনি এসে হাসপাতালের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে, মায়ের দেহ শববাহী গাড়িতে তুলে তা নিজেই চালিয়ে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন। আমরা এই উপকার ভুলব না।’ এমনকী মহিলার শেষকৃত্যের জন্য আর্থিক সাহায্য করেছেন পুর প্রশাসক। অরূপ অবশ্য বলেন, ‘মানুষের বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়াব না! যখন চালককে পাওয়া গেল না, তখন সিদ্ধান্ত নিই নিজেই গাড়ি চালিয়ে মৃতদেহ পৌঁছে দেব।’