বন্ধ চা বাগান মানেই সেই চেনা ছবি। সকাল থেকেই কোনও ব্যস্ততা নেই। শুকনো মুখে বসে থাকা। কীভাবে খাবার জুটবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। একরাশ হতাশা। তবে শুক্রবারটা ছিল একেবারেই অন্যরকম। এদিন জলপাইগুড়ির বন্ধ রায়পুর চা বাগানের জং ধরা গেটটা খোলা হয়েছিল। সেখানে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন শ্রমিকরা। এরপর এল মাংস ভর্তি কড়াই। তারপর এল গরম গরম ভাত। স্বাভাবিকভাবেই এভাবে বাগানে আচমকা মাংস ভাত খাওয়ানোর তোড়জোড় দেখে অবাক তো হওয়ারই কথা।
২০০৫ সালে বাগান বন্ধ হয়েছিল। এরপর বাগান খোলার দাবিতে বহু বার আন্দোলন হয়েছে। মাঝে কিছুদিন খুলেছিল। ফের বন্ধ বাগান। শ্রমিকরা একটা সময় আধপেটা খেয়ে রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠত। তবে একেবারে ভোটের দিন এমন মাংস ভাতের আয়োজনকে ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই নানা প্রশ্ন রয়েছে। তবে এবারই প্রথম ভোটের দিন মাংস ভাত এমনটা নয়। এর আগেও ভোটের আগের রাতে মাংস ভাতের আয়োজন হত নানা জায়গায়।
তবে শেষ পর্যন্ত জানা যায় এই যে মাংস ভাত খাওয়ানোর আয়োজন সেটার মূল উদ্যোক্তা হলেন পাতকাটা পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান তথা বর্তমান প্রধানের স্বামী প্রধান হেমব্রম।
কী কী ছিল মেনুতে? ভাত, ডাল, সবজি, মুরগির মাংস। একেবারে কবজি ডুবিয়ে খাওয়ানোর বন্দোবস্ত। সব মিলিয়ে প্রায় হাজার পাঁচেক মানুষ এই ভোজে অংশ নেন বলে খবর।
শাসক নেতৃত্বের দাবি উৎসবের মেজাজে ভোট হয়েছে। সেকারণেই পিকনিকের আয়োজন। তবে এই অকাল পিকনিককে ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই নানা প্রশ্ন উঠছে। যেখানে বাগান খোলার কোনও ব্যবস্থা নেই, শ্রমিকদের রুটি রুজির বলে কিছু নেই, সেখানে একদিনের পিকনিক কতটা খুশিতে রাখবে চা শ্রমিকদের তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
তবে এবার ভোটের আগেই দেখা গিয়েছিল চা শ্রমিকদের মন মজাতে নানা ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছিল ৬০ হাজারেই কি বদলে যাবে উত্তরের চা বলয়ে ভোটের সমীকরণ? ভোটপর্বে এই প্রশ্নটাই ঘুরছিল উত্তরবঙ্গের একাধিক চা বাগানে। একটু কান পাতলেই শোনা যাচ্ছিল এই ৬০ হাজারের কাহিনি। পাড়ার জটলায়, চা শ্রমিক মহল্লায় এনিয়ে নানা কানাঘুষো চলছে। আসল কথা হল ভোটের ঠিক আগে চা সুন্দরী এক্সটেনশনের নাম করে চা শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে ঢুকছে ৬০,০০০ করে টাকা। আর এটাই নাকি বড় ম্যাজিক! তবে এবার তার সঙ্গে ভোটের দিন যুক্ত হল এই পিকনিক।